ইতিহাসখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা আনোয়ার শাহ্ কাশ্মিরীর (রহ.) জীবনালেখ্য

ও রচিত গ্রন্থাবলী [PDF]

নাম বংশ পরিচয়:

আল্লামা শায়খ মুহাম্মাদ আনোয়ার শাহ্ কাশ্মিরী ইবনে শায়খ মুআয্যম শাহ ইবনে আব্দুল কবির শাহ্ কাশ্মিরী। তার পূর্ব পুরুষগণ বাগদাদ থেকে এসে প্রথমে মুলতানে অবস্থান করেন। অতঃপর সেখান থেকে লাহোরে আসেন। অবশেষে সেখান থেকে কাশ্মীরে আসেন এবং কাশ্মীরই তাদের স্থায়ী আবাসভূমিতে পরিণত হয়।

জন্ম ও শিক্ষাজীবন :

তিনি ২৭ শে শাওয়াল ১২৯২ হিজরীতে ভূ-স্বর্গ ও চির হরিত হিসেবে খ্যাত কাশ্মীরের অন্তর্গত উদওয়ান নামক গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি এক ইলমী ও দীনদার পরিবারের সূক্ষ্ণ তত্ত্বাবধানে ও বিষ্ময়কর শিক্ষানীতিতে লালিত পালিত হয়ে বেড়ে উঠেন। তিনি অনন্যসাধারণ মেধাসম্পন্ন ছিলেন। তার পিতা ছিলেন বিভিন্ন জ্ঞানে ও বিদ্যায় পারদর্শী। যার মধ্যে উলূমে শরঈয়্যাহ, উলূমে আকলিয়্যাহ ও কতক সহযোগী বিদ্যা উল্লেখযোগ্য। তিনি প্রথমে তার পিতা ও নিজ এলাকার শায়খদের কাছে শিক্ষা গ্রহণ করেন।

অল্পদিনের মধ্যেই তিনি তার সহপাঠীদের মাঝে শ্রেষ্ঠত্ব লাভে ধন্য হন। তিনি বাচ্চা বয়সে যখন মুখতাসারুল কুদূরী পড়তেন তখন উস্তাদকে এমন এমন প্রশ্ন করতেন যে, সে প্রশ্নের জবাব দেয়ার জন্য তাকে হেদায়া ও তার শরাহগুলো মুতালাআ করতে হতো। সে সময়কার কোন বড় আলেম তার লেখা পাঠ্য কিতাবের টিকাগুলো দেখে মন্তব্য করেছিলেন : এ ছেলে একদিন এই যুগের গাজালী ও রাযী হবে।

তিনি আরবী ভাষা ,ফিকাহ্, উসূল, তাফসীর, হাদিস প্রভৃতি ইলম বারো বছর বয়সেই মর্মার্থসহ আত্মস্থ করে ফেলেন। তৎকালীন কাশ্মিরে ফিকাহ ও ফাতোয়া ছিল প্রতিযোগিতার বিষয়। তাই শায়খ বারো বছর বয়সেই ফতোয়া প্রদান করতেন। তার ফতোয়া ছিলো বড় বড় শায়খদের ফতোয়ার মতো।

পরবর্তী বয়সে তিনি বিদ্যার্জনের জন্য সফর করার ব্যাপারে সালফে সালিহীনদের সুন্নত বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নেন। ইলম অর্জনের জন্য সুক্ষ, বোধশক্তিসম্পূর্ণ ওলামাদের সাথে পরিচিত হতে লাগলেন। যাতে ইলম ও অভিজ্ঞতার ঝুলি সমৃদ্ধ হয়। নিজ জন্মস্থান কাশ্মীর থেকে সফর করে উপমহাদেশের সবচে’ বড় ইসলামী ভার্সিটি দারুল উলুম আসেন। দেওবন্দ দিল্লী থেকে উত্তর পশ্চিমে একশত মাইল দূরে অবস্থিত।

দ্বীনি মাদরাসা প্রতিষ্ঠায় তাঁর অবদান :

পড়ালেখা শেষ করার পর তিনি দিল্লি শহরে চলে আসেন এবং “মাদরাসায়ে আব্দুর রব নামক” দ্বীনী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কয়েক মাস পাঠদান করেন। স্থানীয় কতিপয় বন্ধু তার মাঝে গভীর ইলমের ছাপ দেখতে পান। বন্ধুরা তাঁকে দিল্লিতে একটি আরবী মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করার জন্য খুব পীড়াপীড়ি করেন। তিনি তাদের পীড়াপীড়িতে মাদরাসা করতে রাজি হন। পরবর্তিতে স্থানীয় হৃদয়বান ও সম্পদশালী মুসলিম ব্যক্তিবর্গের আর্থিক সহযোগিতায় মুহাম্মদ আমীনের নামে (একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু) “আল মাদরাসাতুল আরাবিয়্যাতুল আমিনিয়্যাহ” মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন। আলহামদুলিল্লাহ মাদরাসাটি এখনো স্ব-মহিমায় বহাল আছে।

অল্পদিনের মধ্যেই ভারতবর্ষ জুড়ে মাদরাসাটির সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন এলাকা থেকে ইলম পিপাসু ছাত্ররা এসে মাদরাসায় ভর্তি হতে শুরু করেন। শায়খ কাশ্মিরী (র.) নিজেই সেখানে ইলমে হাদিস, ইলমে তাফসীর, ইলমে বয়ান এবং বিজ্ঞানের পাঠদান করেন। বেশ কয়েক বছর সেখানে শিক্ষকতা করেন। ভারতবর্ষের অনেক বড় খ্যাতিমান আলেম তার এই মাদরাসার ছাত্র।

কিছুদিন পর মাতৃভূমি কাশ্মীরের প্রতি তার হৃদয়ের টান প্রবল হয়ে ওঠে। এছাড়া আমিনীয়া মাদরাসাটির ক্রমোন্নতি অব্যাহত থাকার ব্যাপারে আশাবাদী ছিলেন। তাই তিনি কাশ্মীরে চলে যান এবং “ফয়যে আম” নামে একটি দ্বীনী মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। উক্ত মাদরাসায় তিনি পাঠদানসহ প্রধান মুফতির দায়িত্ব পালন করেন।

কাশ্মীরে উক্ত মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠা করে সেখানে ইলম চর্চা করার তিন বছর পর বাইতুল্লাহ ও হারামে নববী যিয়ারতের আগ্রহ তাকে ব্যাকুল করে তুলে। ১৩২৩ হিজরীতে আল্লাহ তা’য়ালা তাকে হারামাইন শরীফাইন যিয়ারত করার তাওফীক দান করেন। সে সময় তিনি মুসলিম বিশ্বের বড় বড় অনেক আলেমের সাথে সাক্ষাৎ করে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন।

জ্ঞান ও দূর্লভ স্মৃতিশক্তি:

আল্লামা শাইখ আনোয়ার শাহ্ কাশ্মীরি (র.) ছিলেন সুগভীর মেধা ও প্রখর স্মৃতিশক্তির অধিকারী। তাঁর দূর্লভ স্মৃতিশক্তির কারণে তাকে ভ্রাম্যমান লাইব্রেরী নামেও বিদ্বান সমাজে ডাকা হতো।

কথিত আছে, একবার তিনি মিশর ভ্রমণ করার সময় বই পড়ার আগ্রহে কায়রোতে একটি বিখ্যাত লাইব্রেরীতে গমন করলেন। সেখানে খুবই দুষ্প্রাপ্য ও প্রয়োজনীয় একটি কিতাবের সন্ধান পেলেন। তিনি লাইব্রেরী কর্তৃপক্ষের কাছে কিছু দিনের জন্য কিতাবটি ধার চাইলেন। কিন্তু উনারা কিছুতেই তা হস্তান্তর করতে চাইলো না। অগত্যা তিনি লাইব্রেরীতে বসে গভীর মনোযোগের সহিত কিতাবটি অধ্যয়ন করলেন। এরপর তিনি কয়েক মাস পর তার সফর শেষ করে যখন নিজ দেশে ফিরে গেলেন, তখন তিনি সেই লাইব্রেরীতে পড়া কিতাবটির একটি কপি লিখতে আরম্ভ করে দিলেন। কিছুদিনের মধ্যেই তিনি সেই কিতাবটির কপি লেখা শেষ করলেন। কিতাবটি লেখার পর তিনি এটির একটি কপি সেই লাইব্রেরী কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠালেন।

পাঠাগারের কর্তৃপক্ষ উনার পাঠানো কপিটি খুবই গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলেন। তারা খুবই বিস্ময়ের সহিত জানালো যে, আপনার পাঠানো কপিতে শুধুমাত্র একটি নুকতা ছাড়া সবই হুবহু কপি করা হয়ে গিয়েছে।

হযরতের দারসে অংশগ্রহণকারী তালিবে ইলমরা সর্বদা উনার মেধা ও স্মৃতিশক্তির তারিফ করতো। উনার প্রতিটা দারসে এমন হতো যে ছাত্ররা প্রায়ই বলতো- হযরত বুঝি গতকাল দারসের কিতাবটি খুব মনোযোগের সহিত মুতায়ালা করছেন। বাস্তবিপক্ষে, হযরতের কিতাব সর্বশেষ মুতায়ালা হতো কয়েক বছর আগে।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা শাইখকে এই অমূল্য স্মৃতিশক্তির নেয়ামতে করেছিলেন সুসজ্জিত। আর তিনি তার রবের দেয়া ইলমে দ্বীনের এই আলো ছড়িয়ে দিয়েছিলেন পুরো উপমহাদেশ জুড়ে। আল্লাহ তা’য়ালার দ্বীনের প্রচার-প্রসার ও খেদমতে তিনি পুরো জীবন ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ।

আল্লামা কাশ্মিরী (.)- এর লিখিত গ্রন্থাবলি:

তাঁর লিখিত কিতাবগুলো অনন্য বৈশিষ্ট্যাবলির সমাহার। নিম্নে কতিপয় কিতাবের নাম উল্লেখ করা হলো –

১. ফায়যুল বারী শরহু সহিহিল বুখারী (চার খন্ডে সমাপ্ত)
২. আল আরফুশ শাযি শরহু সুনানে তিরমিযী
৩. সুনানে আবু দাউদের তাকরীর (১ খন্ড মুদ্রিত)
৪. মুশকিলাতুল কোরআন
৫. ফসলুল খিতাব ফি মাসআলাতি উম্মিল কিতাব
৬. খাতিমাতুল খিতাব ফি ফাতিহাতিল কিতাব (ফারসী)
৭.  নাইলুল ফারকাদাইন ফি রফইল ইয়াদাইন
৮. বাসতুল ইয়াদাইন লিনাইলিল ফারকাদাইন
৯. কাশফুস সিত্র আন মাসআলাতিল বিত্র
১০. ইকফারুল মুলহিদীন ফি জরূরিয়্যাতিদ দীন
১১. আকীদাতুল ইসলাম বিহায়াতি ঈসা আ.
১২. তাহিয়্যাতুল ইসলাম ফি হায়াতি ঈসা আ.
১৩. আত তাসরীহ বিমা তাওয়াতারা ফি নুযূলিল মাসীহ
১৪. খাতামুন নাবিয়্যীন (ফারসী)
১৫. সাহমুল গাইব ফি কাবিদি আহলির রাইব (ফারসী)
১৬.  আল ইতহাফ লিমাযহাবিল আহনাফ

১৭.  ওরা কাফের কেন?

১৮. আমালিয়্যাতে কাশ্মিরী

ওফাত:

আল্লামা কাশ্মিরী শাহ্ (র.) ঢাবেলের জামিয়া ইসলামিয়ায় পাঁচ বছর অবস্থান করেন। সেখানে তিনি অধ্যাপনা, লেখালেখিতে ব্যস্ত থাকেন। তাঁর পরশে ওই অঞ্চলটি ইলমের নূরে-জ্যোতিতে ভরে ওঠে। সেখানকার এক বিশাল জনগোষ্ঠিকে করেছেন সংশোধন। কিন্তু এক পর্যায়ে ঢাবেলের আবহাওয়া তাঁর জন্য প্রতিকূল হয়। ফলে তিনি অসুস্থ হয়ে আবার দেওবন্দে চলে আসলেন।

ধারণা করা হয়ে ছিলো, আবহাওয়ার পরিবর্তনে হয়তো স্বাস্থ্যের কিছুটা উন্নতি হবে। কিন্তু না; তা হয়নি। ক্রমান্বয়ে অসুস্থতা বাড়তে থাকে। ৩রা সফর ১৩৫২ হিঃ সোমবার দিবাগত রাতে তিনি মাওলার সান্নিধ্যে চলে যান। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আল্লাহ তা’য়ালা তাকে জান্নাতুল ফিরদাউসে সর্বোচ্চস্থান দান করুন। আমীন।।

 

 


# লেখকের রচিত গ্রন্থাবলীর (PDF) কালেকশন সমগ্র:

[নিচের তালিকাবদ্ধ বইয়ের নাম হতে আপনার প্রয়োজনীয় পিডিএফ ফাইলটি ডাউনলোড করতে যেকোন একটি সার্ভারের ডাউনলোড লিঙ্ক বেছে নিন।]

১. ওরা কাফের কেন? – আল্লামা আনোয়ার শাহ্ কাশ্মিরী (রহি.)

Download: 1.      Drive Link            ||

 

[ বি: দ্র: ] বই পড়ুন, বই কিনুন, প্রিয়জনকে বই উপহার দিন। আমাদের সাইটের কোন বই ভালো লাগলে অনুগ্রহপূর্বক মূল বইয়ের হার্ডকপি লাইব্রেরী হতে সংগ্রহ করুন।

মনে রাখবেন, আপনার ক্রয়কৃত বই প্রেরণা যোগায় লেখক ও প্রকাশককে নতুন বই প্রকাশ করতে। লেখক, প্রকাশক ও পাঠক সমাজকে সুসমৃদ্ধ করার প্রয়াসে মূল বই ক্রয়ের কোনো বিকল্প নেই।

অনলাইনে বই ক্রয়ের জনপ্রিয় কয়েকটি প্ল্যাটফর্ম –

  1. https://rokomari.com
  2. https://boibazar.com
  3. https://bookhousebd.com
  4. https://wafilife.com
  5. https://ruhamashop.com

ক্রেডিট
সাইফ খান
Back to top button
error: Python Encryption !!!