খ্যাতনামা ইসলামিক পণ্ডিত ও আলেমে দ্বীন ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (র.)-এর জীবনালেখ্য

ও রচনাবলী [পিডিএফ]

ভূমিকা:

হারিয়ে যাওয়া এক নক্ষত্র ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.)। ইসলাম সম্পর্কে সুগভীর পাণ্ডিত্য ও জ্ঞানগর্ভ আলোচনার কারণে অতি অল্প সময়েই তিনি বাংলাদেশের সর্বসাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেন।

কিন্তু প্রকৃতির নিয়ম হলো যুগে যুগে বিশ্ব বিখ্যাত ব্যক্তিরা ক্ষণজন্মা হয়ে থাকেন। প্রকৃতির এই আমূল সত্যকে বাস্তবে রূপদান করে আমাদের সবার মন জয় করে পাড়ি জমান না ফেরার দেশে, আমাদের শ্রদ্ধেয় আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর স্যার। কিন্তু তিনি ইসলামের অবিনশ্বর সেবার মাধ্যমে জায়গা করে নিয়েছেন আমাদের মণিকোঠায়।

আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীরের জন্ম

ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর ১৯৬১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহের ধোপাঘাট গোবিন্দপুর গ্রামে ধার্মিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা খোন্দকার আনওয়ারুজ্জামান ও মায়ের নাম বেগম লুৎফুন্নাহার।

দাম্পত্য জীবন:

আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর ব্যাক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন।  ফুরফুরা শরিফের পীর আব্দুল কাহার শরিফের মেয়ে ফাতেমা শরিফ ছিলেন উনার সহধর্মীনি।

ফুরফুরা পীর সাহেবের সাথে পারিবারিক সম্পর্কের কারণে তাকে অনেক কটু কথা শুনতে হয়েছে। অনেকে ত আবার তাকে বলতে লাগলেন, “আপনি খারাপ হয়ে গেছেন  ”— প্রতিত্তুরে তিনি হাসিমাখা মুখে বলতেন,

আমি আবার কখন ভাল হলাম, আমি ত খারাপই ছিলাম

শশুর পীর সাহেব উনার মতামতকে মূল্যায়ন করতেন, অকপটে স্বীকার করে নিতেন। মেনে নিবেন না কেন? উনিতো নিজের পকেট থেকে কথা বলতেন না, বলতেন কুরআন সুন্নাহর আলোকে, সেই আলোয়  ফুরফুরা শরীফের বিদায়াতী কার্যক্রম ভষ্ম হয়ে  যায়। এভাবে ফুরফুরা শরীফ বিদায়াত মুক্ত হয়।

শিক্ষাজীবন :

তিনি ঝিনাইদহ শহরের ভুটিয়ারগাতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা লাভ করেন। তারপর ঝিনাইদহ সিদ্দিকীয়া আলিয়া মাদরাসায় ফাযিল পর্যন্ত অধ্যয়ন করে ১৯৭৯ সালে ঢাকা আলিয়া থেকে প্রথম শ্রেণিতে অষ্টম স্থান অধিকার করে হাদীস বিষয়ে কামিল পাশ করেন।

মাদরাসায় অধ্যয়নের পাশাপাশি তিনি মাগুরা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সরকারি কলেজ থেকে এস. এস. সি, এইচ. এস. সি পরীক্ষা দিয়ে কৃতিত্বের সাথে যশোর বোর্ডে প্রথম স্থান অধিকার করেন। সেসময় বিভিন্ন শিক্ষাবোর্ডে যারা প্রথম স্থান অধিকার করেছিলো, তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রীয় সম্মাননার অংশ হিসেবে তাদেরকে নিয়ে নৌ ভ্রমণে বের হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে যশোর শিক্ষাবোর্ডের প্রথম স্থান অধিকারী হিসেবে মরহুম ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীরও ছিলেন।

কামিল পড়ার পর ঝিনাইদহ সদরের নাসনা নূরনগর সিদ্দিকীয়া দাখিল মাদরাসায় প্রায় দুই বছর শিক্ষকতা করেন। অতঃপর তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য সৌদি সরকারের বৃত্তি নিয়ে ১৯৮১ সালে সৌদি আরবের রিয়াদস্থ জামিয়াতুল ইমাম মুহাম্মাদ বিন সাউদ আল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে ১৯৮৬ সালে অনার্স, ১৯৯২ সালে মাস্টার্স ও ১৯৯৮ সালে নাহব (আরবী ব্যাকরণ)-এর ওপর পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

উল্লেখ্য  যে, সেখানে তিনি চূড়ান্ত পরীক্ষায় ৯৬% নাম্বার পেয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেন এবং সেখানে অধ্যয়নকালে বর্তমান সৌদি বাদশা ও তৎকালীন রিয়াদের গভর্নর সালমান বিন আব্দুল আজীজের হাত থেকে পর পর দু’বার সেরা ছাত্রের পুরস্কার গ্রহণ করেন। সৌদি আরবে যে সকল শায়েখের কাছে তিনি হাদীস ও ফিকাহ্ শিখেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন— শায়েখ আব্দুল আযীয বিন বায (রহ.), শায়েখ আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুর রহমান আল-জিবরীন, মুহাম্মাদ ইবন সালিহ ইবনে মুহাম্মাদ আলউছাইমীন (রহ.), শায়েখ সালেহ ইবন ফাওযান  প্রমুখ।

কর্মজীবন:

তিনি ওয়াজ মাহফিলের অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন আলোচক ছিলেন। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সফর করে তিনি মানুষকে শোনাতেন শাশ্বত বাণী, ইসলামের বিশুদ্ধ বাণী।

এছাড়াও তিনি আরবের হানাফী আলেমদের মধ্যে শায়েখ আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ (রহ.)-কে অত্যন্ত পছন্দ করতেন এবং তাঁর রচনাসমূহ প্রচুর পরিমাণে অধ্যয়ন করতেন। উপমহাদেশের আলেমগণের মধ্যে শায়খুল ইসলাম আল্লামা তাকী উসমানী দা.বা. ও তাঁর মানহাজকে খুব পছন্দ করতেন এবং বিভিন্ন ইলমী বিষয়ে তাঁর বক্তব্যকে উদ্ধৃতি হিসেবে পেশ করতেন।

তিনি ইবনে তাইমিয়া (রহ.), ইবনুল কায়্যিম (রহ.), শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলবী (রহ.) ও আব্দুল হাই লখনবী (রহ.)-এর রচনাসমূহ ও চিন্তা-চেতনা দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত ছিলেন এবং তাখাসসুসের ছাত্রদের বিভিন্ন দরসে তাদের আলোচনা করতেন। তবে ফিক্হ বিষয়ে আদর্শ হিসেবে শাহ ওয়ালিউল্লাহ (রহ.)-এর অনুসরণ করতেন।

রিয়াদে অধ্যয়নকালের শেষ সময়ে তিনি উত্তর রিয়াদ ইসলামি সেন্টারে দাঈ ও সৌদি আরবে বসবাসকারী মার্কিন সৈন্য ও ইংরেজি ভাষাভাষীদের মাঝে দাওয়াতী কাজে দোভাষী হিসেবে প্রায় তিন বছর কর্মরত ছিলেন। এছাড়াও তিনি রিয়াদে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে অনুবাদক হিসেবে কাজ করেছিলেন।

মাস্টার্সে পড়াকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কুরআনুল কারিমের ১৮ পারা মুখস্ত করা নির্ধারিত ছিল। তিনি উক্ত ১৮ পারা মুখস্ত করেন। তারপর বাকি পারাগুলো বাসা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ও এ্যাম্বেসীতে যাওয়া-আসার পথে গাড়িতে বসেই প্রায় চল্লিশ বছর বয়সে হিফজ সম্পন্ন করেন এবং দেশে এসে পুরোপুরি ইয়াদ করেন।

তিনি রিয়াদে থাকাকালীন নিজ পরিমলে সুপরিচিত ছিলেন। কারণ তিনি কুল্লিয়াতুল লোগার মুমতাজ ছিলেন। কোনো সৌদি ‘কুল্লিয়াতুল লোগা আলআরাবিয়ায়’ মুমতাজ হওয়া খুবই বিরল। বাংলাদেশী ছাত্রদের মধ্যে তিনিই সর্বপ্রথম সৌদি আরব থেকে পি এইচ ডি করেছিলেন। উল্লেখ্য, তিনি আরবী, বাংলা এবং ইংরেজিতে সমান পারদর্শী ছিলেন, যা তাঁর লেখনী ও বক্তৃতায়, বিশেষত: মিশনারী অপতৎপরতা বিষয়ক দাওয়াতী কাজে অত্যন্ত সহায়ক হয়েছে।

১৯৯৮ সালে  দেশে এসে তিনি প্রথমে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েক মাস শিক্ষকতা করেন। তারপর কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আল হাদীস এ- ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ‘লেকচারার’ হিসেবে  যোগদান করেন। ১৯৯৯ সালে ‘সহকারী অধ্যাপক’, ২০০৪ সালে ‘সহযোগী অধ্যাপক’ ও ২০০৯ সালে তিনি ‘অধ্যাপক’ পদে পদোন্নতি লাভ করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আল ফিক্হ বিভাগের খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

তিনি পাবনা জেলার পাকশীতে অবস্থিত ফুরফুরা দরবারের ‘জামিআতুল কুরআনিল কারীম’ মাদরাসা ও ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত ‘দারুস সালাম’ মাদরাসায় শায়খুল হাদীস হিসেবে সহীহ বুখারীর দরস দিতেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত তাখাসসুস বিভাগদ্বয়েও নিয়মিত দরস দিতেন। শিক্ষক হিসেবে তিনি একজন সফল শিক্ষক ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও যেসকল প্রতিষ্ঠানে তিনি পড়িয়েছেন সেখানকার ছাত্র-সহকর্মীদের আবেগ-অনুভূতি ও অভিব্যক্তি প্রকাশের মধ্য দিয়ে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

এছাড়াও ২০০৩ সাল থেকে তিনি ঝিনাইদহ জেলার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতীব হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। ২০/০১/২০১১ খ্রিস্টাব্দে সমাজসেবা ও দ্বীনের বহুমুখী কাজ যথাযথভাবে আঞ্জাম দেয়ার জন্য ‘আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট’ প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে তাঁর রেখে যাওয়া সকল দ্বীনী কাজ উক্ত প্রতিষ্ঠানের অধীনে সূচারুরূপে পরিচালিত হচ্ছে।

তিনি সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার আহ্বানে দ্বীনী দাওয়াতের উদ্দেশ্যে ইন্দোনেশিয়া, সংযুক্ত আরব-আমিরাত, লিবিয়া ও তুরস্কসহ বিশ্বের অনেক  দেশে সফর করেছেন। বহুবার তিনি হজ্বব্রত পালন করেছেন।

লেখনীআলোচনা ও ওয়াজের বিশেষ বৈশিষ্ট্য:

তিনি খুব সহজ-সরল ভাষায় আলোচনা ও ওয়াজ করতেন। আলোচনা ও লেখনীতে অনেক কঠিন ও জটিল বিষয়কে সহজ সরল বাংলায় সর্বসাধারণের বোধগম্যভাবে উপস্থাপন করতে পারতেন। ইংরেজি বলা ও লেখায় যথেষ্ট পারদর্শী হওয়া সত্ত্বেও আলোচনায় ইচ্ছাকৃতভাবে ইংরেজি শব্দ পরিহার করতেন যেন সাধারণের বুঝতে অসুবিধা না হয়। শিরক, বিদআত, সুন্নাতের গুরুত্ব ও সুন্নাহ অনুসরণ, বান্দার হক্ব, আত্মীয়তার হক্ব, সমকালীন প্রসঙ্গ, সামাজিক ও পারিবারিক বিষয়সহ অন্যান্য সমাজ ও জীবনঘনিষ্ঠ প্রয়োজনীয় বিষয় সহজ ও সাবলীলভাবে আলোচনা করতেন।

সাধারণত আলোচনায় আকীদা ও ফিকহী জটিল বিষয়গুলো এড়িয়ে চলতেন। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন প্রসঙ্গে যুবকদেরকে সম্বোধন করে আলোচনা করতেন। তাদের আবেগ-অনুভূতি ও বিভ্রান্তির বিষয়গুলো তুলে ধরে দরদমাখা ভাষায় সংশোধনের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতেন। এ কারণে যুবকদের বড় একটি শ্রেণি তাঁর ভক্ত ছিলো। তাঁর আলোচনার শেষে সাধারণত একটি প্রশ্নোত্তর পর্ব থাকতো। তিনি মানুষের লিখিত বিভিন্ন প্রশ্নের দলিলভিত্তিক উত্তর দিতেন। কোনো বিষয়ে জানা না থাকলে উত্তর দিতেন না। টিভিতে বা মাহফিলের প্রশ্নোত্তর পর্বে তালাক সংক্রান্ত বিষয়ে উত্তর না দিয়ে স্থানীয় আলেমদের সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিতেন। এছাড়াও তিনি তাঁর ওয়াজ-মাহফিল এবং সেমিনারগুলোর আলোচনায় আধুনিক শিক্ষিত সালাফী ব্যক্তিবর্গকে প্রান্তিকতা পরিহার করে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে মধ্যপন্থা অবলম্বনের জন্য উদ্বুদ্ধ করতেন।

দ্বীন প্রচারে বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ:

তিনি সর্বদা মানুষকে দ্বীনমুখী করার ব্যাপারে সচেষ্ট ছিলেন। মানুষের দ্বীনী উন্নতির ফিকির করতেন। এজন্য তিনি এলাকার মুসলামানদের দ্বীনী শিক্ষাকে সহজ করার জন্য প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দ্বীন-শিক্ষা কার্যক্রম চালু করেন। এক্ষেত্রে তিনি ছেলে-মেয়ে উভয়ের জন্যই পৃথকভাবে পর্দার সাথে কুরআন হিফয করা ও অন্যান্য দ্বীনী শিক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা করেন।

এছাড়াও সাধারণ শিক্ষিত মানুষদের দ্বীনী জ্ঞান লাভ সহজ করার লক্ষ্যে বাংলাভাষায় ধর্মীয় বই-পুস্তক রচনা করেছেন। তাঁর মধ্যে একটি ফিকির ছিলো সমাজের মানুষের পরিবর্তন দরকার, মহিলাদের পরিবর্তন দরকার। তাদেরকে খারাপ পরিবেশ থেকে বাঁচিয়ে ভালো কাজে সম্পৃক্ত করা দরকার। এজন্য এলাকাবাসীদের নিয়ে তাঁর মসজিদে নিয়মিত মাসিক মাহফিলের পাশাপাশি বার্ষিক মাহফিলের আয়োজন করতেন। এলাকার অন্যান্য মসজিদেও মাসিক মাহফিল আয়োজনের চেষ্টা করেছেন এবং তিনি নিজে বা তাঁর প্রতিনিধি পাঠিয়ে মাহফিলগুলোর মাধ্যমে মানুষের মাঝে দ্বীনী সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করতেন।

বাংলাদেশে ধর্মান্তকরণ ফেতনা ও খ্রিস্টান মিশনারীদের অপতৎপরতার প্রতিরোধে তিনি অনন্য ভূমিকা রেখেছেন। ওয়াজ-মাহফিল ও বিভিন্ন রচনার মাধ্যমে তিনি তাদের সম্পর্কে মুসলিম উম্মাহকে সতর্ক করার প্রয়াস পেয়েছেন। এছাড়াও স্থানীয় আলেম ও ইমামগণকে নিয়ে ইলমী ইজতিমার আয়োজন করেন। দ্বীন প্রচারে তাঁর বহুমুখী পদক্ষেপসমূহ নিম্নরূপ :

. উচ্চতর হাদীস গবেষণা বিভাগ এবং উচ্চতর দাওয়াহ ও তুলনামূলক ধর্মবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠা:

ঝিনাইদহ ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের কওমী ও আলিয়া ধারার ছাত্রদেরকে যোগ্য আলেম হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ১৪৩৩ হিজরীতে ‘উচ্চতর হাদীস গবেষণা বিভাগ’ প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়াও মুসলিম-অমুসলিম সকলের মাঝে দাওয়াতী কাজের যোগ্য লোক তৈরি করা, খ্রিস্টান মিশনারীদের অপতৎপরতা ও অপপ্রচার প্রতিরোধে যোগ্য দাঈ তৈরি করা এবং সাধারণ মুসলিমদেরকে এ বিষয়ে সচেতন করার লক্ষ্যে ১৪৩৪ হিজরীতে ‘উচ্চতর দাওয়াহ ও তুলনামূলক ধর্মবিজ্ঞান বিভাগ’ প্রতিষ্ঠা করেন।

. কিতাব বিভাগ ও নূরানী মক্তব প্রতিষ্ঠা:

‘আল ফারুক একাডেমী’ নামে আলিয়া মাদরাসার আদলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত একটি প্রতিষ্ঠান ও একটি হিফয খানা চালু ছিলো। এই প্রতিষ্ঠানের শিশু ও কেজি শ্রেণিতে বিভিন্ন কিন্ডার গার্টেনের জন্য রচিত অপেক্ষাকৃত ভালো বই পড়ানো হতো। ইতঃপূর্বে প্রতিষ্ঠানটি দাখিল বা দশম শ্রেণি পর্যন্ত ছিলো এবং আলিয়া ও সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত লোকদের দ্বারা পাঠদান করানো হতো।

তিনি যখন দেখলেন, আলিয়া মাদরাসার পাঠ্যক্রম অনুযায়ী ছেলেদের মধ্যে ইলমী যোগ্যতা তৈরি হচ্ছে না, এছাড়াও আনুষঙ্গিক নানা কারণে ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে তাকওয়া ও দ্বীনদারির অভাবও প্রকট। তখন তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও দ্বীনের কাজে সহযোগী জনাব শামসুল আরেফিন সাহেবের পরামর্শে উক্ত প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তে কওমী মাদরাসা কেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা চালু করেন। হিফজ বিভাগসহ সকল বিভাগে কওমী ধারার উলামায়ে কেরামকে সম্পৃক্ত করেন।

তিনি বলতেন, ‘আমার শ্বশুর তো (ফুরফুরার পীর মরহুম আবুল আনসার মুহাম্মাদ আব্দুল কাহহার সিদ্দিকী রাহ.) বিষয়টি আরও আগে বুঝতে পেরেছিলেন, তাই পাবনা জেলার পাকশীতে এবং ঢাকার মিরপুর দারুস সালামে আলিয়া মাদরাসা বাদ দিয়ে কওমী মাদরাসা চালু করেন। তবে আমার বুঝতে একটু দেরী হলো।’ পরবর্তীতে ১৪৩৪ হিজরী শাওয়াল থেকে তিনি কিতাব বিভাগ চালু করেন।

এছাড়াও এলাকার শিশুদের দ্বীনের মৌলিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার লক্ষ্যে প্রাইমারী শিক্ষার ক্ষেত্রে কিন্ডার গার্টেন বাদ দিয়ে জানুয়ারী ২০১৫ থেকে যোগ্য শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে হাটহাজারী নূরানী বোর্ডের অধীনে চার বছর মেয়াদী আবাসিক-অনাবাসিক নূরানী মক্তব প্রতিষ্ঠা করেন। নূরানী মক্তবে বর্তমানে প্রায় আড়াইশ ছাত্র-ছাত্রী দ্বীনী শিক্ষা লাভ করছে। এছাড়াও তিনি ঝিানাইদহ জেলার হরিশঙ্করপুর ইউনিয়নের ভোজঘাট গ্রামে ও চুয়াডাঙ্গা জেলার পদ্মবিলা ইউনিয়নের সুবদিয়া গ্রামে ‘মারকাযুস সুন্নাহ’ নামে দুটি নূরানী মক্তব পরিচালনা করতেন।

ঝিনাইদহ জেলায় তেমন কোনো কওমী মাদরাসা নেই। সহশিক্ষাযুক্ত কিছু আলিয়া মাদরাসা আছে। তবে বর্তমানে কয়েক বছর হলো ঝিনাইদহ শহরে কিছু মক্তব ও হিফযখানা গড়ে উঠেছে। তিনি এসকল মাদরাসার সাথে গভীর সম্পর্ক রাখতেন এবং সেখানকার কোনো অনুষ্ঠানে ডাকলে শত ব্যস্ততার মাঝেও তাদের ডাকে সাড়া দিতেন। এ সকল মাদরাসার অনুষ্ঠানে উপস্থিত লোকদের মাঝে খুব জোরালোভাবে প্রচলিত শিক্ষার বিপরীতে ইসলামী শিক্ষার্জনের অপরিহার্যতার বিষয়ে যৌক্তিক ও তথ্যপূর্ণ আলোচনা করতেন।

. বালিকা হিফজ বিভাগ ও কিতাব বিভাগ প্রতিষ্ঠা:

ঝিনাইদহ এলাকায় ইসলামী জ্ঞানে অভিজ্ঞ এবং তাকওয়া, আখলাক, আদব ও সমাজ সচেতন নারী তৈরি করার লক্ষ্যে ১৪৩৫ হিজরীতে পর্যায়ক্রমে সম্পূর্ণ পৃথক ব্যবস্থাপনায় বালিকা হিফজ বিভাগ ও কিতাব বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন।

. লেখনী ও ধর্মীয় বইপুস্তক রচনা:

তিনি ছোট-বড় ত্রিশের অধিক অনুবাদ, ব্যাখ্যা ও গবেষণামূলক মৌলিক গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর মৌলিক গ্রন্থসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ইহইয়াউস সুনান’, ‘রাহে বেলায়াত’, ‘খুতবাতুল ইসলাম’ এবং সর্বশেষ অনবদ্য রচনা পবিত্র বাইবেল : পরিচিতি ও পর্যালোচনা’; যেটি ছাপানোর কাজে ঢাকায় যাওয়ার পথেই তিনি মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে ইন্তেকাল করেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)

তিনি তাঁর রচনাসমূহে যে কোনো বিষয়ে বিশ্লেষণধর্মী আলোচনার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মৌলিক ও প্রাচীন গ্রন্থসমূহের ওপর নির্ভর করতেন। সালাফী দাওয়াত দ্বারা প্রভাবিত অনেক যুবকের মাঝে তাঁর বইপত্রগুলো বেশ সমাদৃত হচ্ছে।

. মাসিক মাহফিল:

প্রতি ইংরেজি মাসের প্রথম শুক্রবার আস-সুন্নাহ জামে মসজিদে মাসিক মাহফিলের আয়োজন করতেন। উক্ত মাহফিলে তিনি নিজেই মাগরিব থেকে এশা পর্যন্ত আলোচনা করতেন এবং এশার নামাযের পর মানুষের বিভিন্ন  প্রশ্নের উত্তর দিতেন।

উক্ত মসজিদের নীচ তলায় মাহফিলের আয়োজন করা হতো আর দ্বিতীয় তলায় মহিলাদের জন্য পৃথকভাবে বসে ওয়াজ শোনার ব্যবস্থা থাকত। মহিলাদের মাঝে দ্বীনী চেতনা সৃষ্টির লক্ষ্যে তাঁর নেয়া প্রথম পদক্ষেপ ছিলো পরিপূর্ণ পর্দার সাথে মহিলাদের ওয়াজ শোনার ব্যবস্থা করা। পর্দা রক্ষার্থে মহিলাদের আসা-যাওয়ার রাস্তাও পৃথক ছিলো।

তিনি সাধারণত মহিলাদেরকে ওয়াক্তিয়া নামায মসজিদে না এসে ঘরে আদায় করার ব্যাপারে উৎসাহিত করতেন। কিন্তু বাজার, স্টেশন বা জনসমাগমপূর্ণ রাস্তার পার্শ্ববর্তী মসজিদসমূহে মহিলাদের পৃথকভাবে নামাযের ব্যবস্থা রাখার ব্যাপারে গুরুত্ব দিতেন, যেন মহিলাদের নামায কাযা না হয়ে যায়। তবে জুমার বয়ান শোনার উদ্দেশ্যে কেবল শুক্রবারে মহিলাদেরকে তাঁর মসজিদে আসার কথা বলতেন। (যদিও উক্ত বিষয়ে আলিমদের দলিলভিত্তিক ভিন্নমত রয়েছে।)

. ইলমী ইজতিমা:

ঝিনাইদহ ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক খালেছ দ্বীনী প্রতিষ্ঠান না থাকার কারণে এলাকার অনেক মসজিদে অশুদ্ধ তিলাওয়াত ও ধর্মীয় জ্ঞানশূন্যতা ব্যাপক। তাই তিনি ঝিনাইদহ জেলার সকল থানার বিভিন্ন মসজিদের ইমাম ও মুয়াযযিনদের নিয়ে নিজ প্রতিষ্ঠানস্থ মসজিদে প্রায় মাসেই ‘ইলমী ইজতিমা’-এর আয়োজন করতেন।

এখানে নির্দিষ্ট দিন আসরের পর থেকে পরবর্তী দিন সকাল আটটা পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা ও প্রশিক্ষণ, কুরআন মশক, প্রশ্নোত্তর পর্ব ও ইমামগণের প্রশিক্ষণমূলক আলোচনার মাধ্যমে মজলিসটি প্রাণবন্ত হয়ে উঠতো। উল্লেখ্য, প্রতি ‘ইলমী ইজতিমা’য় একটি বই নির্ধারণ করে দেয়া হতো যে বইটি পাঠ করার পর পরবর্তী ‘ইলমী ইজতিমা’য় সে বিষয়ক পর্যালোচনা ও পরীক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে ইমাম ও মুয়াযযিনগণের ইলমী জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করার প্রয়াস চালানো হতো।

পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী সকলকে পুরস্কৃত করা হতো এবং প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারীগণকে আকর্ষণীয় পুরস্কার প্রদান করা হতো। উক্ত অনুষ্ঠানে তিনি নিজে পর্যাপ্ত সময় দেয়ার পাশাপাশি তাঁর প্রতিষ্ঠানের যোগ্য উলামায়ে কেরামগণ দ্বারা বিষয়ভিত্তিক আলোচনার ব্যবস্থা করতেন।

. খ্রিস্টান মিশনারীদের অপতৎপরতার প্রতিরোধ:

তিনি সর্বদা দেশ ও মুসলিম উম্মাহকে নিয়ে ভাবতেন। মুসলিম উম্মাহর প্রতি তাঁর যে দরদ, সেটি তাঁর কাছের লোকদের কাছে অস্পষ্ট ছিলো না। বর্তমানে বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক মুসলিমকে খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারকগণ কুরআন সুন্নাহর বিকৃতি ও অপব্যাখ্যার মাধ্যমে ঈসায়ী মুসলিম বা ঈসায়ী তরীকার মুরিদ হওয়ার নামে ধর্মান্তরিত করছে।

এ সকল অপপ্রচারের প্রতিরোধ ও বিভ্রান্ত জনগোষ্ঠীকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্তি থেকে রক্ষা করার জন্য  তিনি ছোট-বড় একাধিক মৌলিক গ্রন্থ লিখেছেন :

(ক) ‘ইযহারুল হক’ (গুরুত্বপূর্ণ টীকাসহ অনূদিত ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত)। (খ) ‘কিতাবুল মোকাদ্দস, ইঞ্জিল শরীফ ও ঈসায়ী ধর্ম’। তাতে খ্রিস্টধর্ম অনুসারীদের পক্ষ থেকে ইসলাম ও মুসলিমদের ওপর আরোপিত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর ও খ্রিস্টধর্মের অসারতা তাদের ধর্মগ্রন্থের আলোকে প্রমাণ করেছেন।

(গ) ‘পবিত্র বাইবেল : পরিচিতি ও পর্যালোচনা’। এটি বাইবেলের প্রকৃত ইতিহাস, উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ সম্পর্কে একটি মৌলিক গ্রন্থ। বইটিতে তিনি বাইবেলের অসারতা প্রমাণে ইহুদী-খ্রিস্টান বা পাশ্চাত্য বাইবেল গবেষক ও সমালোচকদের মতামত মূল ইংরেজি উদ্ধৃতিসহ উল্লেখ করেছেন।

খ্রিস্টান মিশনারীদের অপতৎপরতা প্রতিরোধে একদল অভিজ্ঞ লোক তৈরির জন্য ‘উচ্চতর দাওয়াহ ও তুলনামূলক ধর্মবিজ্ঞান বিভাগ’ চালু করেছেন। উক্ত বিভাগের তত্ত্বাবধানে ঝিনাইদহ ও পার্শ্ববর্তী জেলাসমূহের মিশনারী কার্যক্রম কবলিত এলাকাগুলোতে দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিল ও ব্যক্তিগত আলোচনায় মিশনারীদের অপতৎপরতা ও বিভ্রান্তির বিষয়ে তথ্যভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে উলামায়ে কেরাম ও সাধারণ মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করতেন। এ বিষয়ে যে কোনো কাজে  দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে কেউ আহ্বান করলে নিজের কাজ মনে করে তাতে তিনি শরীক হওয়ার চেষ্টা করতেন।

বিধর্মীদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেয়ার জন্য তিনি ডা. জাকির নায়েককে পছন্দ করতেন এবং তার ঢালাও সমালোচনা পছন্দ করতেন না। পাশাপাশি তিনি এটাও বলতেন, ডা. জাকির নায়েক যদি তার দাওয়াতী কাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতেন তাহলেই ভালো হতো। ফিকহী বিষয়ে তার মতামত দেয়া উচিত হয়নি। পাশাপাশি একজন দাঈ হিসেবে সুন্নাতি পোশাক পরিধান করাটা তার জন্য শোভনীয়। আমরা তার ভুলকে ভুল বলব; ভালোটা ভাল বলব। (অবশ্য সেবামূলক কাজটা ভাল তরীকায় হচ্ছে কি না, সালাফের আকীদা ও মানহাজের রেয়ায়েত করে  হচ্ছে কি না সেটা ভেবে দেখার অবশ্যই প্রয়োজন আছে।)

. টিভিতে প্রোগ্রাম:

মরহুম আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের ইসলামী অনুষ্ঠানে ‘আলোচক’ হিসেবে নিয়মিত অংশগ্রহণ করতেন। জাতি ও সমাজ-গঠনমূলক অনুষ্ঠানের তুলনায় টিভি চ্যানেলগুলো যেহেতু অশ্লীলতা ও বেহায়াপনার প্রচার-প্রসারে বেশি ব্যবহৃত হয় তাই এ বিষয়ে তিনি অত্যন্ত সজাগ ছিলেন, যেন ইসলামী অনুষ্ঠান দেখার নামে কেউ অশ্লীলতার কবলে পড়ে না যায়। এজন্য তিনি ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় ও মাহফিলে তাঁর রচিত ধর্মীয় গ্রন্থগুলো পড়তে মানুষকে উৎসাহিত করলেও ‘টিভি প্রোগ্রামগুলো’ দেখতে কাউকে উৎসাহিত করতেন না।

তাঁর সমাজ-গঠনমূলক অনুষ্ঠানগুলো পরিবারস্থ লোকজনকে দেখানোর জন্য নিজের বাসায়ও কোনো টিভি ছিলো না। তিনি প্রায়ই বলতেন, যারা টিভিতে সারাক্ষণ নাচ-গান দেখে তারা যেন এর ফাঁকে ভালো কিছু দেখে বা দেখতে চাইলে দেখতে পারে সে জন্যই সেখানে যাওয়া, যদি এর মাধ্যমে কেউ সঠিক পথ লাভ করে!

. দাওয়াতী কাজে আধুনিক প্রযুক্তির উত্তম ব্যবহার:

লেখালেখির সকল কাজ তিনি নিজেই করতেন। তিনি কম্পিউটারের বিভিন্ন প্রোগ্রাম সম্পর্কে অত্যন্ত দক্ষ ছিলেন এবং নির্ভুলভাবে খুব দ্রুত লিখতে পারতেন। এজন্য তাঁর লেখালেখিতে অনেক বরকত হয়েছে। ইন্টারনেট, অনলাইনভিত্তিক টিভি চ্যানেল, ওয়েবসাইট, ও অন্যান্য আধুনিক প্রযুক্তিকে (অনিবার্য খারাবী থেকে যথাসাধ্য বেঁচে) দ্বীনী দাওয়াতের কাজে ব্যবহার করতেন; যেন এসবের মাধ্যমে মানুষ হেদায়েত লাভ করতে পারে।

সামাজিক কর্মকাণ্ড:

. সেলাই প্রশিক্ষণ:

সাধারণত মাহফিলগুলোর মাধ্যমে সাময়িকভাবে মানুষের মাঝে দ্বীনী চেতনার সৃষ্টি হয়, কিন্তু তাঁর একান্ত কামনা ছিলো মানুষের মাঝে বিশেষত মহিলাদের মধ্যে স্থায়ী দ্বীনী চেতনা সৃষ্টি করা। এজন্য প্রয়োজন ছিলো প্রাত্যহিক ব্যবস্থাপনার অধীনে দ্বীন শেখানো।

কিন্তু বর্তমান বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে সাধারণ শিক্ষিত ও দুঃস্থ মহিলাদের মাঝে দ্বীনী শিক্ষা ও দ্বীনী চেতনা প্রসারে আমাদের উদাসীনতার সুযোগে দেশী-বিদেশী এনজিওসমূহ বিভিন্নভাবে তাদেরকে দ্বীন ও ঈমানী চেতনা থেকে বিচ্যুত করছে। তাই মহিলাদের মধ্যে স্থায়ী দ্বীনী চেতনা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে তিনি নিয়মতান্ত্রিকভাবে তাদেরকে দ্বীন শেখানোর ব্যবস্থা করেন।

এ লক্ষ্যে সাধারণ শিক্ষিত ও দুঃস্থ মহিলাদের মাঝে দ্বীনী শিক্ষা ও দ্বীনী চেতনার প্রসারে ছয় মাস ব্যাপী কুরআন তিলাওয়াত সহীহ করা ও দ্বীনের মৌলিক বিষয়গুলো শেখানোর পাশাপাশি স্থানীয় সমাজ-সেবা অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অভিজ্ঞ প্রশিক্ষিকার মাধ্যমে সেলাই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। সেখানে প্রতিদিন দুই ঘন্টাব্যাপী ক্লাসের অর্ধেক সময় ধর্মীয় বিষয়াদির জন্য বরাদ্দ ছিলো। প্রশিক্ষণ শেষে তাদেরকে সনদপত্র দেয়ার ক্ষেত্রেও দ্বীনী ক্লাসে নিয়মিত অংশগ্রহণ শর্ত ছিলো। পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে কয়েকজনকে পুরস্কার স্বরূপ সেলাই মেশিন ও সেলাই উপকরণ প্রদান করা হয়।

. বিনামূল্যে চিকিৎসাসহায়তা প্রকল্প:

আর্ত মানবতার সেবা ও মানুষদেরকে দ্বীনি পরিবেশের সাথে পরিচিত করার মাধ্যমে দ্বীনমুখী করার লক্ষ্যে প্রতি শুক্রবার মাদরাসায় স্থানীয় সরকারী হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও অভিজ্ঞ হোমিও চিকিৎসক দ্বারা রোগী দেখার ব্যবস্থা করেন। সেখানে রোগীদেরকে বিনামূল্যে ব্যবস্থাপত্র ও জরুরি ঔষধ প্রদান করা হয়।

. নওমুসলিমদের তত্ত্বাবধান:

তিনি নওমুসলিমদের প্রতি সবিশেষ খেয়াল রাখতেন এবং বেশ কয়েকজন নওমুসলিমকে তাঁর তত্ত্বাবধানে রেখে পড়াশোনা ও অন্যান্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।

. আস সুন্নাহ ট্রাস্ট:

তাঁর জীবনের অমর কৃর্তী হল নিজ হাতে  গড়া ‘আস সুন্নাহ ট্রাস্ট’ । এই প্রতিষ্ঠানটি আমাদের কাছে তাঁর রেখে যাওয়া আমানত।

আস সুন্নাহ ট্রাস্ট তিনি নিজস্ব ভূমির উপর নিজ অর্থায়ানে গড়ে তুলেছেন। সুবিশাল জায়গা নিয়ে গড়ে উঠা  প্রতিষ্ঠানটি সুন্নাতের আলোকে উদ্ভাসিত আলেম জাতিকে উপহার দিয়ে যাচ্ছে। সেই সাথে সাপ্তাহিক, মাসিক প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমাদের দ্বীনি চাহিদা পূরণ করে আসছে।

হুবহু সুন্নাহর অনুসরণ:

তাঁর একটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো ‘আকায়েদ-ইবাদত ও আখলাকের’ ক্ষেত্রে হুবহু সুন্নাহর অনুসরণ। এসকল ক্ষেত্রে তিনি সর্বাগ্রে সুন্নাহকে সামনে নিয়ে আসতেন। নির্দিষ্ট বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা সাহাবায়ে কেরাম (রা.) থেকে কোনো আমল আছে কি না, সেটা তালাশ করতেন এবং পাওয়া গেলে তিনি সেটাই পালন করার চেষ্টা করতেন।

ইবাদত পালন এবং ইবাদতের পারিভাষিক বিভিন্ন শব্দ ব্যবহার ও তাবীরের ক্ষেত্রে তিনি হুবহু সুন্নাহ সমর্থিত শব্দগুলো ব্যবহার করা পছন্দ করতেন। যেমন ‘নামায-রোযার’ পরিবর্তে ‘সালাত-সাওম’, ‘শবে বরাত’ শব্দের পরিবর্তে ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’, প্রভৃতি ব্যবহার করতেন। যিকির ও দুআর ক্ষেত্রে হাদীসে বর্ণিত শব্দগুলোই ব্যবহার করতেন এবং অন্যদেরকে এই শব্দগুলো ব্যবহার করার জন্য উৎসাহিত করতেন। এই বিষয়ে তার কিতাব রাহে বেলায়েত এবং যিকর ও ওযীফা কিতাব দুটি বিশেষ ভাবে লক্ষ্যণীয়।

যে কোনো পরিস্থিতিতে হক্বকে গ্রহণ করা:

তাঁর একটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো, কোনো ধরনের ইলমী গোঁড়ামী তাঁর মধ্যে ছিলো না। তিনি সবসময় হক বিষয়টি কবুল করে নিতেন, নিজের মত আঁকড়ে থাকতেন না। যখনই কোনো বিষয় তাঁর সামনে দলিলভিত্তিক উপস্থাপন করা হয়েছে এবং বিষয়টি তিনি বুঝতে পেরেছেন, তৎক্ষণাৎ তাঁর পূর্বের মত থেকে ফিরে এসেছেন।

সময়ের মূল্যায়ন:

তিনি সময়ানুবর্তিতার সাথে জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন। কোনোভাবেই সময়ের অপচয় করতেন না। তাঁর ব্যক্তিগত সমৃদ্ধ লাইব্রেরী ছিলো, যেখানে তাফসীর, হাদীস, ফিকহ, উসূল ও আরবী সাহিত্য বিষয়ক মৌলিক গ্রন্থাদির পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণ বাংলা-ইংরেজি বইও ছিলো। তিনি প্রচুর পড়াশোনা করতেন, যা তাঁর তথ্যবহুল লেখনী ও আলোচনা দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রতিভাত হয়।

কওমী আলিমদের সাথে গভীর সম্পর্ক:

জীবনের শেষ দশকে কওমী আলেমদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের সাথে তাঁর গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিশেষত ‘মারকাযুদ্ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকা’— তে তাঁর যাওয়া-আসা এবং সেখানকার ইলমী গবেষণা দ্বারা তিনি গভীরভাবে প্রভাবিত হন।

মারকাযুদ দাওয়াহ্’র প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি প্রায়ই বলতেন, “আমার ছাত্ররা বড় অফিসার হওয়ার চেয়ে অল্প আলোতে বসে কুরআন-হাদীস নিয়ে গবেষণা করবে, কিতাবপত্র ঘাঁটাঘাঁটি করবে- আমি মনে করি দুনিয়া ও আখিরাতে এটাই আমার বড় পাওয়া।” এ লক্ষ্যেই তিনি পর্যায়ক্রমে ‘তাখাসসুস’ ও ‘কিতাব বিভাগ’ চালু করেন। পরবর্তীতে তিনি হাটহাজারী মাদরাসায় এক সফরে গেলে সেখানকার নূরানী শিক্ষাব্যবস্থা দ্বারা অত্যন্ত মুগ্ধ হন এবং সে বছরই কিন্ডার গার্টেন বাদ দিয়ে নূরানী পদ্ধতিতে প্রাইমারী শিক্ষা চালু করেন।

এ সময়ে তাঁর বিশ্বাস জন্মেছিলো যে, কওমী ধারার উলামায়ে কেরামের সাথে না থেকে সহীহভাবে দ্বীনের কাজ করাটা কঠিন। এজন্য তিনি তাহকীকী মেজাযসম্পন্ন ও সুন্নাহপ্রেমী কওমী উলামায়ে কেরামের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এটাও তিনি অনুভব করেন যে, প্রথম দিকে আলিয়া ধারার উলামায়ে কেরামকে নিয়ে কাজ করলেও তাতে বরকত হয়নি কওমী আলিমদেরকে তাঁর কাজের সাথে সম্পৃক্ত করার পর যখন তিনি তাঁদের আস্থা অর্জন করলেন, তখন সেই অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, “আল্লাহ তাআলা আসসুন্নাহ ট্রাস্টকে কবুল করে নিয়েছেন।

কওমীআলিয়াবিশ্ববিদ্যালয় ও আধুনিক শিক্ষিতদের মধ্যে সমন্বয়:

তিনি সকল ধারার উলামায়ে কেরাম ও দ্বীনদার লোকজনকে নিয়ে চলতেন। কওমী, আলিয়া ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-ছাত্র ও আধুনিক শিক্ষিতদের মধ্যে সমন্বয়ের চেষ্টা করতেন। এ লক্ষ্যেই তিনি আততাখাসসুস ফী উলূমিল হাদীস’ ও আততাখাসসুস ফিদ দাওয়াহ’ বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন। যেখানে সুন্দর ব্যবস্থাপনায় কওমী, আলিয়া ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী এবং যোগ্যতাসম্পন্ন ছাত্ররা পড়াশুনা করছে।

আমাদের দেশে যারা আলিয়া বা বিশ্ববিদ্যালয়-কেন্দ্রিক পড়াশোনা বা শিক্ষকতা করেন, সাধারণত তারা নিজেদেরকে দ্বীনের খেদমতের সাথে সম্পৃক্ত না করে চাকরিকেই তাদের লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে ফেলেন। আবার অনেকে তাদের দ্বারা দ্বীনের খেদমত করা সম্ভব বলেও মনে করেন না। কিন্তু আলিয়া ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা ও শিক্ষকতা করার পাশাপাশি দ্বীনের বহুমুখী খেদমত করাও যে সম্ভব, মরহুম তাঁর বৈচিত্র্যময় কর্মবহুল জীবন দ্বারা সেটি প্রমাণ করে গেছেন।

ইন্তেকাল:

১১ই মে ২০১৬ ঈ. রোজ বুধবার আনুমানিক সকাল আটটার দিকে এই খ্যাতনামা আলেমে দ্বীন ঝিনাইদহ থেকে ঢাকা যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে মাগুরা সদর উপজেলার পারনান্দুয়ালী এলাকার ঢাকা রোডের ৩নং ব্রিজ নামক স্থানে বিপরীত দিক থেকে আসা ‘রাইফ কার্গো সার্ভিস’-এর কাভার্ডভ্যানের সাথে তাঁর ব্যক্তিগত গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে তিনি ও তাঁর গাড়ির ড্রাইভার তৎক্ষণাৎ ইন্তেকাল করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন।

মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিলো আটান্ন বছর। বিভিন্ন কারণে অনাকাঙ্খিতভাবে তাঁর নামাযে জানাযা দেরি হয়ে যায়। পরদিন ১২ মে বাদ মাগরিব ঝিনাইদহ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের বিশাল মাঠে জানাযার নামাযের ঘোষণা দেয়া হয়। এদিন দুপুর থেকেই প্রচণ্ড রোদ ছিলো। কিন্তু আসরের সময় আকাশ মেঘলা হয়ে যায় এবং দু-এক ফোঁটা বৃষ্টি ও মৃদুমন্দ বাতাস হাজারো মানুষের পদভারে ধূলিধূসরিত মাঠের পরিবেশকে শীতল ও ধূলামুক্ত করে দেয়। এরূপ মেঘলা শীতল পরিবেশে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ তাঁর জানাযার নামায আদায় করে।

স্মরণকালের বৃহত্তম এই জানাযার মত আর কোনো জানাযা ঝিনাইদহবাসী দেখেনি। তাঁর প্রতিষ্ঠিত আস-সুন্নাহ জামে মসজিদের নিকটে পিতার কবরের পাশে তাঁকে দাফন করা হয়। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রেখে যাওয়া সকল ভালো কাজ কবুল ও মাকবূল করুন এবং তাঁকে জান্নাতে উঁচু মাকাম দান করুন। আমীন।।

 

 


# লেখকের রচিত গ্রন্থাবলীর (PDF) কালেকশন সমগ্র:

[নিচের তালিকাবদ্ধ বইয়ের নাম হতে আপনার প্রয়োজনীয় পিডিএফ ফাইলটি ডাউনলোড করতে যেকোন একটি সার্ভারের ডাউনলোড লিঙ্ক বেছে নিন]

১. আল ফিকহুল আকবার – ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর অনূদিত

Download: 1.      Drive Link           ||

২. আল মউযুআত – ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর

Download: 1.      Drive Link           ||

৩. আল্লাহর পথে দাওয়াত – ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর

Download: 1.      Drive Link           ||

৪. ইসলামী আকীদা – ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর

Download: 1.      Drive Link           ||

৫. ইসলামে পর্দা – ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর

Download: 1.      Drive Link           ||

৬. ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ – ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর

Download: 1.      Drive Link           ||

৭. ঈদ-ই মিলাদুন্নবী প্রবর্তন ও প্রবর্তক – ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর

Download: 1.      Drive Link           ||

৮. উশর বা ফসলের যাকাত – ড. খোন্দকার আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর

Download: 1.      Drive Link           ||

৯. এহইয়াউস সুনান – ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর

Download: 1.      Drive Link           ||

১০. কিতাবুল মোকাদ্দস ইঞ্জিল শরীফ ঈসায়ী ধর্ম – ড. খন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর

Download: 1.      Drive Link           ||

১১. কুরআন-সুন্নাহর আলোকে ইসলামী আকীদা – ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর

Download: 1.      Drive Link           ||

১২. কুরআন-সুন্নাহর আলোকে পোশাক পর্দা ও দেহসজ্জা – ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর

Download: 1.      Drive Link           ||

১৩. কুরবানী ও জাবীহুল্লাহ – ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর

Download: 1.      Drive Link           ||

১৪. খুতবাতুল ইসলাম – ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর

Download: 1.      Drive Link           ||

১৫. জিজ্ঞাসা ও জবাব (১ম খণ্ড) – ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর

Download: 1.      Drive Link           ||

১৬. জিজ্ঞাসা ও জবাব (২য় খণ্ড) – ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর

Download: 1.      Drive Link            ||

১৭. পবিত্র বাইবেল পরিচিতি ও পর্যালোচনা – ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর

Download: 1.      Drive Link           ||

১৮. মুনাজাত ও নামায – ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর

Download: 1.      Drive Link           ||

১৯. রাহে বেলায়াত ও রাসুলুল্লাহর (ﷺ) যিকির-ওযীফা – ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর

Download: 1.      Drive Link           ||

২০. শবে-বরাত ফযীলত ও আমল — ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর

Download: 1.      Drive Link           ||

২১. সহীহ মাসনূন ওযীফা – ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর

Download: 1.      Drive Link           ||

২২. সালাতের মধ্যে হাত বাঁধার বিধান – ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর

Download: 1.      Drive Link           ||

২৩. হাদীসের নামে জালিয়াতি: প্রচলিত মিথ্যা হাদীস ভিত্তিহীন কথা – ড. খন্দকার জাহাঙ্গীর

Download: 1.      Drive Link           ||

 

[ বি: দ্র: ] বই পড়ুন, বই কিনুন, প্রিয়জনকে বই উপহার দিন। আমাদের সাইটের কোন বই ভালো লাগলে অনুগ্রহপূর্বক মূল বইয়ের হার্ডকপি লাইব্রেরী হতে সংগ্রহ করুন।

মনে রাখবেন, আপনার ক্রয়কৃত বই প্রেরণা যোগায় লেখক ও প্রকাশককে নতুন বই প্রকাশ করতে। লেখক, প্রকাশক ও পাঠক সমাজকে সুসমৃদ্ধ করার প্রয়াসে মূল বই ক্রয়ের কোনো বিকল্প নেই।

অনলাইনে বই ক্রয়ের জনপ্রিয় কয়েকটি প্ল্যাটফর্ম –

  1. https://rokomari.com
  2. https://boibazar.com
  3. https://bookhousebd.com
  4. https://wafilife.com
  5. https://ruhamashop.com
ক্রেডিট
মুহাম্মাদ জাকারিয়া
Back to top button
error: Python Encryption !!!