প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও বিচারপতি শাহ্ মুহাম্মাদ হাবীবুর রহমানের জীবন পর্যালোচনা

ও রচনাবলী [পিডিএফ]

ভূমিকা:

শাহ্ মুহাম্মাদ হাবিবুর রহমান বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং পরবর্তীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা তথা দেশের অন্তবর্তীকালীন সরকার প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি একাধারে গবেষক, লেখক, শিক্ষাবিদ, আইনজীবী, রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ, ভাষা সৈনিক, অভিধানপ্রণেতা। ১৯৪৯ হতে ৫২ পর্যন্ত ভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

জন্ম ও পরিবার:

১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের ৩ ডিসেম্বর ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার জংগীপুর মহকুমার দয়ারামপুর গ্রামে মুহাম্মাদ হাবিবুর রহমান জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মৌলভী জহিরউদ্দিন বিশ্বাস ছিলেন আইনজীবী ৷

জহিরউদ্দিন বিশ্বাস ছিলেন একজন সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী। তিনি প্রথমে আঞ্জুমান এবং পরে মুসলিম লীগ আন্দোলনের সাংগঠনিক পর্যায়ে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন৷ দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় হাবিবুর রহমানের পিতা জাতীয় যুক্তফ্রন্টের বিভাগীয় নেতা ছিলেন ৷ পশ্চিমবঙ্গ সরকার ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে তাঁকে গ্রেফতার করে বহরমপুর কারাগারে পাঠায়, অবশ্য কয়েকদিন পরই জহিরউদ্দিন বিশ্বাস মুক্তি লাভ করেন।

ভারত বিভাগের পর ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে মুশির্দাবাদ থেকে স্থানান্তরিত হয়ে তৎকালীন চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং পরবর্তীতে রাজশাহীতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। হাবিবুর রহমানের পিতা মৌলভী জহিরউদ্দিন বিশ্বাস বিয়ে করেছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুরের মিসেস গুল হাবিবাকে। শুধু নানার বাড়ি নয়, বিচারপতি হাবিবুর রহমান নিজেও বিয়ে করেছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিববঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর গ্রামে। হাবিবুর রহমানের শৈশবের অনেকখানি কেটেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের এই শ্যামপুরে (নানার বাড়ি)। পরবর্তীতে শ্যামপুর শ্বশুর বাড়ি হওয়ায় এখানে তিনি মাঝে মাঝে বেড়াতে আসতেন।

শিক্ষাজীবন:

মুহাম্মাদ হাবিবুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিষয়ে ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে বি.এ. সম্মান ও ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে এম.এ. পাশ করেন। পরবর্তীতে তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আধুনিক ইতিহাসে ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে বি.এ. সম্মান ও স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।

কর্মজীবন:

হাবিবুর রহমান তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দিয়ে। এরপর তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। সেখানে তিনি ইতিহাসের রিডার (১৯৬২-৬৪) ও আইন বিভাগের ডিন (১৯৬১) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি আইন ব্যবসায়কে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন এবং ঢাকা হাই কোর্ট বারে যোগ দেন। তিনি সহকারী এডভোকেট জেনারেল (১৯৬৯), হাই কোর্ট বার এসোসিয়েশনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট (১৯৭২) ইত্যাদি দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ বার কাউন্সিলেরও (১৯৭২) সদস্য ছিলেন। ১৯৭৬ থেকে ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে পর্যন্ত তিনি হাইকোর্টের বিচারপতি ছিলেন। ১৯৮৫ সালে তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট-এর আপিল বিভাগে নিয়োগ লাভ করেন।

তিনি ১৯৯৫ পর্যন্ত আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯০-৯১ মেয়াদে বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ অন্তবর্তীকালীন সরকার প্রধান হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করলে হাবিবুর রহমান বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট-এর ভারপ্রাপ্ত বিচারপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।

দেশে-বিদেশে বিচারপতি হাবিবুর রহমান অনেক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। এগুলোর মধ্যে প্রধান হল— অস্ট্রেলিয়ার পার্থে অনুষ্ঠিত এশিয়া প্যাসিফিক দেশসমূহের প্রধান বিচারপতিদের সম্মেলন (১৯৯১), নাইজেরিয়ার আবুজাতে চতুর্থ কমনওয়েলথ প্রধান বিচারপতিদের সম্মেলন (১৯৯২), নেপালের কাঠমুন্ডুতে প্রথম সার্ক প্রধান বিচাপতিদের সম্মেলন (১৯৯৫)।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা:

১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে বিচারপতি হাবিবুর রহমান বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি হিসেবে তিনি ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা তথা দেশের অন্তবর্তীকালীন সরকার প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

সাহিত্যচর্চা:

একজন গবেষক এবং লেখক হিসেবেও বিচারপতি হাবিবুর রহমান সাহিত্য ও অন্যান্য বহু ক্ষেত্রে অনেক অবদান রেখেছেন। তার প্রকাশিত বইগুলোর মধ্যে অন্যতম হল:

  • ল’ অফ রিকুইজিশন (১৯৬৬)
  • রবীন্দ্র প্রবন্ধে সঞ্জনা ও পার্থক্য বিচার (১৯৬৮)
  • যথা-শব্দ (১৯৭৪)
  • মাতৃভাষার স্বপক্ষে রবীন্দ্রনাথ (১৯৮৩)
  • কোরআন সূত্র (১৯৮৪)
  • বচন ও প্রবচন (১৯৮৫)
  • গঙ্গাঋধি থেকে বাংলাদেশ (১৯৮৫)
  • রবীন্দ্র রচনার রবীন্দ্র ব্যাখ্যা (১৯৮৬)
  • রবীন্দ্র কাব্যে আর্ট, সঙ্গীত ও সাহিত্য (১৯৮৬)
  • অন রাইট্‌স আন্ড রিমেডিস্‌
  • আমরা কি যাব না তাদের কাছে যারা শুধু বাংলায় কথা বলে (১৯৯৬)
  • ভাষার আপন পর (২০১২)

ইন্তেকাল:

শাহ্ মুহাম্মাদ হাবিবুর রহমান ২০১৪ সালের ১১ জানুয়ারি রাজধানী ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন।

 

 


# লেখকের রচিত গ্রন্থাবলীর (PDF) কালেকশন সমগ্র:

[নিচের তালিকাবদ্ধ বইয়ের নাম হতে আপনার প্রয়োজনীয় পিডিএফ ফাইলটি ডাউনলোড করতে যেকোন একটি সার্ভারের ডাউনলোড লিঙ্ক বেছে নিন]

১. অর্থনীতিতে রাসূল (ﷺ)-এর দশ দফা – প্রফেসর শাহ্ মুহাম্মাদ হাবীবুর রহমান

Download: 1.      Drive Link           ||

২. ইসলামী অর্থনীতি নির্বাচিত প্রবন্ধ – শাহ মুহাম্মদ হাবীবুর রহমান

Download: 1.      Drive Link           ||

৩. ইসলামী ব্যাংকিং: বৈশিষ্ট্য ও কর্ম পদ্ধতি – শাহ মুহাম্মদ হাবীবুর রহমান

Download: 1.      Drive Link           ||

৪. ইসলামের অর্থনৈতিক বিপ্লব – শাহ মুহাম্মদ হাবীবুর রহমান

Download: 1.      Drive Link           ||

৫. মাল্টি লেবেল মার্কেটিং প্রসঙ্গ – প্রফেসর শাহ মুহাম্মদ হাবীবুর রহমান

Download: 1.      Drive Link           ||

৬. সুদ – শাহ মুহাম্মদ হাবীবুর রহমান

Download: 1.      Drive Link           ||

৭. সুদ: এক ভয়াবহ অভিশাপ পরিত্রাণের উপায় – শাহ মুহাম্মদ হাবীবুর রহমান

Download: 1.      Drive Link           ||

 

[ বি: দ্র: ] বই পড়ুন, বই কিনুন, প্রিয়জনকে বই উপহার দিন। আমাদের সাইটের কোন বই ভালো লাগলে অনুগ্রহপূর্বক মূল বইয়ের হার্ডকপি লাইব্রেরী হতে সংগ্রহ করুন।

মনে রাখবেন, আপনার ক্রয়কৃত বই প্রেরণা যোগায় লেখক ও প্রকাশককে নতুন বই প্রকাশ করতে। লেখক, প্রকাশক ও পাঠক সমাজকে সুসমৃদ্ধ করার প্রয়াসে মূলবই ক্রয়ের কোনো বিকল্প নেই।

অনলাইনে বই ক্রয়ের জনপ্রিয় কয়েকটি প্ল্যাটফর্ম –

  1. https://rokomari.com
  2. https://boibazar.com
  3. https://kitabghor.com
  4. https://wafilife.com
  5. https://ruhamashop.com

ক্রেডিট
উইকিপিডিয়াযুবায়ের আল হাসান
Back to top button
error: Python Encryption !!!