
পবিত্র আল-কুরআনুল কারীমের তাফসীর কালেকশন্স
কুরআন মাজীদ তেলাওয়াত
এটা পবিত্র কুরআনের একটি স্বতন্ত্র হক এবং আল্লাহ তাআলার অতি বড় এক ইবাদত। এর বহু আদব রয়েছে। প্রকৃত মুমিনের বৈশিষ্ট্য হল, সে যথাযথ আদব রক্ষা করে প্রতিদিন কুরআন তেলাওয়াত করবে।
‘তাজবীদের সাথে পড়া, মাখরাজ ও সিফাতের প্রতি লক্ষ্য রাখা এবং পাঠরীতির অনুসরণ করা তেলাওয়াতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। আজকাল এ ব্যাপারে চরম উদাসীনতা লক্ষ্য করা যায়।কুরআন মাজীদের অর্থ ও তাফসীর বুঝার জন্য সময় বের করা হয়, কিন্তু তেলাওয়াত সহীহ করার জন্য মশক করা কিংবা মশকের জন্য সময় বের করার প্রয়োজন বোধ করা হয় না।
‘এমনিভাবে লক্ষ্য করা যায়, অনেকে কুরআনের প্রতি দাওয়াত দেওয়ার জন্য তো সময় বরাদ্দ করে, কিন্তু কুরআন শেখার ওতাজবীদের সাথে তেলাওয়াতের যোগ্যতা অর্জন করার জন্য সময় দিতে চায় না। এটাও এক মারাত্মক অবহেলা।”
[দ্র. ভূমিকা, তাফসীরে তাওযীহুল কুরআন (বাংলা) প্রথম প্রকাশ, পৃ. ১৯]
দ্বিতীয় মূলনীতি
দ্বিতীয় মূলনীতি হচ্ছে, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআর নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিদের স্বীকৃত তরজমা–তাফসীর পাঠ করা।যখন আমাদের তরজমা–তাফসীর পাঠ করতে হবে তাহলে নির্বাচন করতে হবে।এ ক্ষেত্রে স্মরণ রাখতে হবে যে, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ অর্থাৎ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষা, সাহাবায়ে কেরামের নীতি–আদর্শের উপর যারা রয়েছেন উম্মাহর সেই জামাতের যারা স্বীকৃত ব্যক্তিত্ব, ইলম তাকওয়া পরহেযগারী এই সকল বিষয়ে যারা স্বীকৃত তাদের স্বীকৃত তরজমা–তাফসীরই পাঠ করব।
বাজারে গিয়ে যে কোনো একটি তরজমা–তাফসীর সংগ্রহ করে তা পড়া শুরু করে দিলাম এমনটা কিছুতেই উচিত নয়।আমার উদ্দেশ্য, আমি কুরআনের ইলম অর্জন করব।কিন্তু কুরআনের ইলম অর্জন করা তো অনেক উপরের ব্যাপার এটা তো সাধারণ কোনো শাস্ত্রের ইলম অর্জন করারও উপযুক্ত পন্থা নয় যে, বাজারে গিয়ে যে বই পেলাম তা–ই সংগ্রহ করলাম এবং পাঠ করতে আরম্ভ করে দিলাম।এজন্য দ্বিতীয় মূলনীতি হচ্ছে, কী পাঠ করবেন তা আপনাকে নির্বাচন করতে হবে।আর নির্বাচনের মানদণ্ড হবে, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআর অনুসারী স্বীকৃত ব্যক্তিত্বের স্বীকৃত তরজমা–তাফসীর।
ইলমে দ্বীনের ক্ষেত্রে এই মূলনীতি সালাফ থেকে চলে আসছে।ইমাম মুসলিম রাহ. তার সহীহ মুসলিমের মুকাদ্দিমায় বিখ্যাত তাবেয়ী মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন রাহ.–এর যে বাণী উল্লেখ করেছেন তা আমাদের জানা আছে—
إِنّ هذا الْعِلْمَ دِيْنٌ فَانْظُرُوْا عَمّنْ تَأْخُذُوْنَ دِيْنَكُمْ.
এই ইলম, অর্থাৎ দ্বীনের ইলম এটাও দ্বীন।সুতরাং লক্ষ্য রেখো কাদের কাছ থেকে, কোন্ সূত্র থেকে তোমাদের দ্বীন গ্রহণ করছ?
আমাদের একজন বিখ্যাত ফকীহ আবুল লাইস সমরকন্দী রাহ.। ৩৭৩ হিজরীতে ওফাত। বুস্তানুল আবিদীন কিতাবে তার একটি বক্তব্য আছে। তিনি বলেন—
يَنْبَغِيْ أنْ لايُؤْخَذَ الْعِلْمُ إلا مِنْ أَمِيْنٍ ثِقَةٍ لِأَنّ قِوامَ الدِيْنِ بِالعِلْمِ.
ইলম অর্জন করতে হবে আমানতদার, নির্ভরযোগ্য, আস্থাভাজন ব্যক্তির কাছ থেকে। কেন?
لِأَنّ قِوامَ الدِيْنِ بِالعِلْمِ.
কারণ, ইলমে দ্বীনের মাধ্যমেই দ্বীনদারি গঠিত হয়। দ্বীনদারি রক্ষা পায়।
কাজেই যদি আপনার ইলম অর্জনটা সঠিক সূত্র থেকে না হয়, তাহলে আপনার দ্বীনদারিও সঠিক হবে না দ্বীনদারিই তো উদ্দেশ্য। মানুষের দুনিয়া–আখেরাতের সফলতা নির্ভর করে তার সঠিক দ্বীনদারির উপর। আর সঠিক দ্বীনদারি নিশ্চিত করতে হলে দ্বীনের ইলম সঠিক সূত্র থেকে গ্রহণ করতে হবে।
তৃতীয় মূলনীতি
এটারই সম্পূরক মূলনীতি তৃতীয় মূলনীতি হিসেবে যেটা বলব সেটা হচ্ছে, আহলুল বিদআতি ওয়াল ফুরকাহ থেকে দূরে থাকা। এক শ্রেণি হল আহলুস সুন্নাতি ওয়াল জামাআহ। এর বিপরীত শ্রেণি হল আহলুল বিদআতি ওয়াল ফুরকাহ।
আহলুস সুন্নাতি ওয়াল জামাআহ মানে, যারা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ, সাহাবায়ে কেরামের জামাআত এবং প্রতি যুগের আহলে হকের জামাত যে আদর্শের উপর ছিলেন, রয়েছেন তাদের অনুসারী।আর আহলুল বিদআতি ওয়াল ফুরকাহ মানে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ, খুলাফায়ে রাশেদীন ও সাহাবায়ে কেরামের সুন্নাহ থেকে যারা বিচ্যুত হয়েছে এবং আকীদা আহকাম আমল এই সকল বিষয়ে কুরআন–সুন্নাহর স্বীকৃত পথ থেকে, যে পথের উপর মুসলিম উম্মাহ যুগ যুগ ধরে রয়েছে, যারা বিচ্যুত হয়েছে, এদের থেকে, এদের তরজমা–তাফসীর শীর্ষক বইপত্র থেকে দূরে থাকতে হবে।
এটা গুরুত্বপূর্ণ। এটা যদি না হয় তাহলে দ্বীনের সহীহ আকীদা আহকাম জানার জন্য তরজমা–তাফসীর পড়বেন, কিন্তু সূত্র ভুল হওয়ার কারণে গলদ আকীদা, গলদ আহকামের দিকে চলে যেতে পারেন।
এটা একটা বাস্তবতা যে, ইসলামের শুরুর যুগের পর থেকে ব্যাপকভাবে মুসলিমসমাজে বিভিন্ন রকমের বিদআহ ও গোমরাহী তৈরি হয়েছে এবং প্রত্যেক যুগে ওলামায়ে কেরাম সেগুলোকে চিহ্নিত করে তাদের দায়িত্ব পালন করেছেন।এই বাস্তবতাটা মনে রাখা দরকার। বাস্তবতাকে কখনো এড়িয়ে যাওয়া যায় না। বাস্তবতাকে স্মরণ রেখেই অগ্রসর হতে হয়।
বাতিলপন্থীরা তাদের তরজমা-তাফসীর শীর্ষক বইপত্রে যে অসাধুতা অবলম্বন করেছে তা উল্লেখ করে ইমাম ইবনে কুতাইবা রাহ. তার তাবীলু মুখতালিফিল হাদীস (تأويل مختلف الحديث) কিতাবে বলছেন–
و فسروا القرآن بأعجب تفسير يريدون أن يردوه إلى مذاهبهم و يحمل التأويل على نحلهم.
ছোট্ট একটি বাক্য কিন্তু পুরো চিত্রটা এসে গেছে।
و فسروا القرآن بأعجب تفسير.
ওরা অদ্ভুতভাবে কুরআনে কারীমের ব্যাখ্যা করেছে।
কী রকম অদ্ভুত?
يريدون أن يردوه إلى مذاهبهم.
তারা চায় যে কুরআনকে তাদের মাযহাবের দিকে নিয়ে যাবে।
এখানে মাযহাব দ্বারা ফিকহী মাযহাব উদ্দেশ্য না। এখানে মাযহাব অর্থ মতবাদ।ঐ সকল বাতিল ফেরকা তাদের সকল আকীদাগত বিচ্যুতি, কর্মগত বিচ্যুতি কুরআনে কারীম দ্বারা প্রমাণ করতে চায় এবং মনভাবে কুরআনে কারীমের ব্যাখ্যা করতে চায়, যেন তা তাদের ভ্রান্ত আকীদা, ভ্রান্ত কর্মের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে হয়। নাউযুবিল্লাহ!
এরা কুরআন থেকে কী আলো গ্রহণ করবে? এরা তো তাদের অন্ধকার মতবাদ কুরআনের উপর আরোপ করতে চায়।এটা বাতিলপন্থীদের এক বিরাট পরিচয়। কুরআনে কারীমের তরজমা–তাফসীরের নামে এরা এরকমের অপকর্ম করেছে।কাজেই যারা কুরআনে কারীমের তরজমা-তাফসীর পাঠ করতে চায় তাদেরকে অবশ্যই এই বাস্তবতা সম্পর্কে সাবধান থাকতে হবে।
কেউ যদি জিজ্ঞাসা করেন যে, কী কী ধরনের অপব্যাখ্যা করা হয়েছে, তাহলে বলব, সব রকমের অপব্যাখ্যাই করা হয়েছে।একেবারে কুফুর পর্যায়েরও আছে। যেমন অমুসলিমদের বিভিন্ন দাবি–দাওয়া–মতবাদ।খ্রিস্টান মিশনারীরা তাদের মিশনারী কার্যক্রমের জন্য কুরআনে কারীমের বিভিন্ন আয়াতকে ব্যবহারের অপচেষ্টা করেছে।আমাদের দেশেও এরকম তৎপরতা আছে।
এরপর কাদিয়ানী সম্প্রদায়, যারা অমুসলিম, তারাও তাদের মিশনারী তৎপরতাকে অগ্রসর করার জন্য কুরআনে কারীমের বিভিন্ন ভাষায় তরজমা করেছে। কিছুদিন আগে আমাদের দেশেও তাদের কুরআন তরজমার প্রদর্শনী হয়েছে।
মুসলিমসমাজেও এরকম অনেক বাতিল ফিরকা আছে, যারা তাদের বাতিল বিদআতি মতবাদকে সাব্যস্ত করার জন্য কুরআনে কারীমের তরজমা–তাফসীর শিরোনামে বই লিখেছে এবং সেখানে এই কাজটা করেছে।
বেরেলভী সম্প্রদায়ের একজন বিখ্যাত ব্যক্তি আহমদ রেজা খান সাহেব। তার তরজমায়ে কুরআন আছে।সেই তরজমায়ে কুরআনের নাম ‘কানযুল ঈমান’! কানযুল ঈমান অর্থ ঈমানের খাজানা। ঈমানের ভাণ্ডার।এর টীকা লিখেছেন তাদেরই আরেকজন বেরলভী মৌলভী নাঈমুদ্দীন সাহেব খাজায়েনুল ইরফান নামে।এই তরজমা ও টীকা সামনে নিয়ে বসলে দেখা যাবে, ইবনে কুতাইবা রাহ. তাবীলু মুখতালিফিল হাদীসে বিদআতপন্থীদের যেপরিচয় উল্লেখ করেছেন তা কীভাবে মিলে যাচ্ছে।
আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআর আলিমগণ এই পুরো তরজমা এবং তাফসীরের বিশ্লেষণ করেছেন এবং বিশ্লেষণের ফলাফল আমাদের সামনে রেখে গেছেন। এ সম্পর্কে অনেক বই–পত্র লিখিত হয়েছে।
আমাদের একজন বড় আলেম হযরত মাওলানা সরফরাজ খান সফদর রাহ, এ বিষয়ে ‘তানকীদে মাতীন বর তাফসীরে নাঈমুদ্দীন’ নামে বই লিখেছেন।ওখানে তিনি ধরে ধরে দেখিয়ে দিয়েছেন, কীভাবে কুরআনে কারীমের তরজমার মধ্যে বিকৃতি সাধন করা হয়েছে, এরপর টীকার মধ্যে সেই বিকৃতিকেই সম্প্রসারিত করে তাদের মতবাদ মানুষের কাছে উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে।
হযরত মাওলানা সরফরাজ খান সফদর রাহ. আহমদ রেজা খান সাহেবের তরজমার পদ্ধতি সম্পর্কে বলেছেন, তিনি তরজমার মধ্যে একটা–দুইটা করে শব্দ বাড়িয়ে বাড়িয়ে তার মত কুরআনে কারীমের তরজমায় ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।এরপর টীকায় তাদের মতবাদ বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে এই ধারণা দেওয়া হয়েছে যে, কুরআনে কারীমের তরজমা–তাফসীর থেকেই এই মতটা সাব্যস্ত হচ্ছে। অথচ পুরো ব্যাপারটাই প্রতারণা।
এখন আপনি যদি শুধু তরজমা পড়েন, সাবধান না হন যে, কার তরজমা পড়ছেন, তাহলে তো আপনি বিভ্রান্ত হয়ে যাবেন। মনে করবেন, এই সকল কথা কুরআনে কারীমে শেখানো হয়েছে। নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক। এ জন্য এই মূলনীতিটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
চতুর্থ মূলনীতি
চতুর্থ বিষয় হল, আপনি যখন নির্ভরযোগ্য আস্থাভাজন ব্যক্তির সঠিক তরজমা পাঠ করবেন তা কি নিজে নিজেই পাঠ করবেন, না কারো নির্দেশনায় পাঠ করবেন? এখানে আমরা চতুর্থ মূলনীতিটি বলব। আর তা হচ্ছে বিজ্ঞ ও পরহেযগার আলিমের কাছে তরজমা পাঠ করা। তরজমা দরসান দরসান পড়তে হবে। নিজে নিজে পড়তে গেলে কিছু জায়গা হয়ত বুঝে আসবে, কিন্তু অনেক জায়গায় ভুল হয়ে যাওয়ার আশংকা।
যারা কুরআনের বাণী মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার শুভকামনা থেকে কুরআনের তরজমা করেছেন, টীকা লিখেছেন তাদের অনেকেই এই মূলনীতি উল্লেখ করেছেন। তাদের যেহেতু পুরো কুরআনে কারীমের ভাষা–উপস্থাপনা–বিষয়বস্তু ইত্যাদির সাথে সরাসরি জানা শোনা ছিল, তাই তারা এই মূলনীতিটা উল্লেখ করার প্রয়োজন বোধ করেছেন।
কুরআনে কারীমের উপস্থাপনা অত্যন্ত উঁচু মানের আরবীয় উপস্থাপনা। একইসাথে তার আছে অনন্য কিছু বৈশিষ্ট্য। অন্যদিকে দ্বীন–শরীয়তের রুচি–প্রকৃতি ও বিধি–বিধানের সাথে দিনদিন মানুষের সম্পর্ক দুর্বল হচ্ছে, তাই শুধু তরজমা থেকে অনেকের ভুল–ভ্রান্তি হতে পারে। এজন্য সাধারণ মানুষের কর্তব্য হবে, তরজমা–তাফসীর পাঠের ক্ষেত্রে অবশ্যই কোনো বিজ্ঞ পরহেযগার আলিমের তত্ত্বাবধান গ্রহণ করা। ভালো হয় কারো কাছ থেকে পড়ে নেওয়া।
সাধারণত তরজমাটাকে পড়ার বিষয় মনে করা হয় না। আসলে তরজমাও পড়ার বিষয়, কুরআনে কারীমের তরজমা কোনো বিজ্ঞ আলিমের কাছে পড়ে নিতে হবে।
আমাদের এই উপমহাদেশের বিজ্ঞ ওলামায়ে কেরামের একজন হলেন শাইখুল হিন্দ হযরত মাওলানা মাহমুদ হাসান রাহ.। তাঁর কুরআন তরজমা আছে। সেই তরজমার সাথে কিছু অংশের টীকাও তিনি লিখেছিলেন। বাকি সিংহভাগ টীকা লিখেছেন শাইখুল ইসলাম হযরত মাওলানা শাব্বীর আহমদ উসমানী রাহ.। এর বাংলা তরজমা ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও অন্যান্য প্রকাশনী থেকে তাফসীরে উসমানী নামে ছাপা হয়েছে।
শায়খুল হিন্দ রাহ. এই মূলনীতিটা খুব গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করেছেন। তিনি তো তরজমা এজন্যই করেছেন যেন সাধারণ মানুষ তা পড়তে পারে। কুরআনে কারীমের নূর যদ্দুর তাদের পক্ষে সম্ভব যেন সরাসরি হাসিল করতে পারে। এরপরও তিনি নিজেই এই মূলনীতিটা উল্লেখ করছেন। এটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
হযরত শাইখুল হিন্দ রাহ.–এর তরজমায়ে কুরআনের নাম ‘মুজিহুল ফুরকান’। যেহেতু হযরত শাহ আব্দুল কাদের রাহ. কৃত তরজমায়ে কুরআন– মুজিহে কুরআন তার সামনে ছিল এবং মূলত সেটাকে সামনে রেখেই তিনি এই তরজমা করেছেন এজন্য তার তরজমার নাম রেখেছেন মুজিহুল ফুরকান। মুজিহুল ফুরকানের ভূমিকাতে তরজমার গুরুত্ব, তরজমা পাঠের কাম্যতা ইত্যাদি বিষয় আলোচনা করার পরে তিনি লিখছেন—
اس لئے عام و خاص اہل اسلام پر لازم ہے کہ اپنے اپنے درجہ اور لیاقت کے موافق کلام اللہ کے پڑھنے اورسمجھنے میں غفلت اور کوتاہی نہ کریں قرآن شریف کے اوپر کے درجہ کے مطالب اور خوبیاں تو عالموں کے سمجھنے کی باتیں ہیں مگر جو لوگ علم عربی سے نا واقف ہیں انکو بھی کم سے کم اتنا ضرور ہےۓ کہ علماءۓ دین نے جو صحیح اورسلیس ترجمہ انکی زبان میں کر دئے ہیں انکے ذریعہ سے اپنے معبود کے مقدس کلام کے سمجھنے میں غفلت اور کم ہمتی نہ کریں۔
اور اس نعمت عظمی سے محروم نہ رہیں کہ بڑی بد بختی اور خسارہ کی بات ہے،مگر ۔۔۔
সরাসরি আরবী ভাষা জানা না থাকলেও ওলামায়ে কেরাম সহজ সরল সর্বজনবোধ্য ভাষায় কুরআনে কারীমের যে তরজমা করে দিয়েছেন সেই তরজমার আলোকে নিজের মাবুদ ও উপাস্য আল্লাহ রাব্বুল আয়’লামীনের কালাম বোঝার ক্ষেত্রে যেন কোনরকম উদাসীনতা প্রদর্শন না করা হয়। তবে,
কী তবে?
مگر ہمیں یہ اندیشہ ضرور ہے کہ صرف فارسی خواں یا اردو داں جو کلام عرب سے نہ واقف ہے اردو ترجمہ کو دیکھکر کچھ کا کچھ سمجھ جائے گا،
কিন্তু আরবী ভাষার সাথে এবং দ্বীনী উলূমের সাথে যাদের সম্পর্ক নেই, শুধু উর্দূ ভাষা বা ফাসীর্ ভাষা জানেন তারা যদি সরাসরি তরজমা পড়তে যান তাহলে আশংকা আছে যে, তারা বুঝতে ভুল করবেন। প্রকৃত বিষয় না বুঝে অন্য কিছু বুঝে ফেলবেন।’
এই আশঙ্কার কিছু কারণ উল্লেখ করার পরে বলছেন–
سو ان وجوہ سے لازم ہے کہ استاذ سے سیکھنے میں مسلمان کاہلی اور کوتاہی نہ کرے، اور محض اپنی رائے پر اعتماد کر کے ثواب کے بدلے اللہ کا غصہ نہ کمائےۓ، و الله الموفق و هو يهدي السبيل. مقدمہ ترجمہ ص32– اصل مقدمہ ص81ـ82
তো যিনি সাধারণ মানুষের জন্য তরজমা করেছেন তিনিই তরজমার ভূমিকাতে এই কথাটা উল্লেখ করে দিচ্ছেন।
আরেকজন বিখ্যাত তরজমা ও তাফসীরকার, এই উপমহাদেশের বিখ্যাত মনীষী হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রাহ.। তিনি তাঁর তরজমা–তাফসীরের মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেছেন যে, ‘এটার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, কুরআনের অর্থ মর্ম সহজ সরলভাবে বুঝিয়ে দেওয়া। এটাকে আপনি বিস্তারিত তরজমাও বলতে পারেন, সংক্ষিপ্ত তাফসীরও বলতে পারেন।’
তাহলে এই তাফসীরের উদ্দেশ্য, কুরআনে কারীমের সহজ সরল অর্থ মর্ম মানুষকে বুঝিয়ে দেওয়া। উদূর্ ভাষাভাষী মানুষ যেন কুরআনে কারীমের অর্থ মর্ম বুঝতে পারে এবং কুরআনে কারীমের নূর ও বারাকাত আহরণ করতে পারে এই শুভ কামনা থেকেই তরজমা–তাফসীর করেছেন, কিন্তু একইসাথে সাবধান করে দিচ্ছেন যে,
لیکن باوجود اتنے رعایت کے بھی غیر علماء اور طلبہ کے لئے بہت سے مقامات میں علماء سے استغناء نہیں ہو سکتا
অর্থাৎ ‘শুধু প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর আলোচনা এবং বিভিন্নভাবে সহজ সরল ভাষায় উপস্থাপনার চেষ্টা সত্ত্বেও যারা আলেম নন, দ্বীনী ইলমের ছাত্রও নন তাদের কিন্তু অনেক জায়গাতেই আলেমের শরণাপন্ন হতে হবে।’
এটা কে বলছেন? যিনি তরজমা, তাফসীর করেছেন তিনি বলছেন। কারণ তার তো পুরো কুরআনে কারীমের উপরে নজর আছে।
এরপর তরজমা পাঠের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের জন্য পরামর্শ দিয়ে লেখেন—
لھذا مناسب بلکہ واجب یہ ہے کہ ایسے حضرات صرف اپنے مطالعہ و فہم پر اعتماد نہ فرماوے بلکہ حسب ضرورت علماء یا منتہی طلبہ سے اسکو سبقا سبقا پڑھلے
ورنہ اقل درجہ اتنا تو ضرور ہے کہ مطالعہ کے وقت جہاں ذرہ برابر بھی اشتباہ رہے وہاں خود غور کر کے نہ نکالے بلکہ پنسل سے نشان کر کے علماء سے وہ عبارت دیکھلا کر حل کر لے اوربدون اسکے احتمال بلکہ یقین غلط فہمی کا ہے
‘এরকম ব্যক্তিরা যারা আলিমও নন, দ্বীনী উলূমের ছাত্রও নন, তারা শুধু নিজেদের অধ্যয়ন ও নিজেদের বুঝের উপর নির্ভর করবেন না। আলেমদের কাছ থেকে অথবা দ্বীনী প্রতিষ্ঠানের উঁচু শ্রেণির ছাত্রদের কাছ থেকে এই তাফসীরটা ক্লাসে পড়ার মতো করে পড়ে নেবেন।
‘অন্তত এইটুকু তো অবশ্যই করবেন যে, তরজমা–তাফসীর পাঠের সময় যে জায়গাটা পুরোপুরি বুঝে আসেনি সেখানে নিজের পক্ষ থেকে কোনো একটা ব্যাখ্যা দাঁড় না করিয়ে জায়গাটা পেন্সিল দিয়ে দাগ দিয়ে রাখবেন। এরপর সুবিধামত সময় আলেমের কাছ থেকে জিজ্ঞেস করে বুঝে নিবেন।
এই কর্মপন্থা অনুসরণ না করা হলে উস্তাযের কাছে নিয়মিত বা অনিয়মিতভাবে না পড়া হলে আপনার ভুল বোঝার সম্ভাবনা আছে, বরং বলা যায়, নিশ্চিতভাবেই তা ঘটবে।’ (ভূমিকা, বয়ানুল কুরআন)
পঞ্চম মূলনীতি
তরজমা পাঠের উদ্দেশ্য। কেন আমরা তরজমা–তাফসীর পাঠ করব? তরজমা পাঠের উদ্দেশ্য কি গবেষক হওয়া? না, গবেষক হওয়া নয়। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে আমি যেন আমার আকীদা–আমল, বিশ্বাস ও কর্মে কুরআনে কারীমের খাইর–বরকত অর্জন করতে পারি। সরাসরি কুরআন মাজীদের সম্মোধন দ্বারা নিজেকে আপ্লুত করতে পারি। এই বিষয়টা অবশ্যই মনে রাখতে হবে। এজন্য প্রথম কাজ হল নিয়তকে বিশুদ্ধ করা। আমি শুধু আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টির জন্যই তরজমা–তাফসীর পড়ব। কুরআনের নূর ও আলো আহরণ করার জন্য পড়ব। এই ক্ষেত্রে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই হাদীসকে সতর্কবার্তা হিসেবে স্মরণ রাখা উচিত।
من طلب العلم ليجاري به العلماء أو ليماري به السفهاء أو ليصرف به وجوه الناس إليه أدخله الله النار.
‘যে আলেমদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতার উদ্দেশ্যে, অথবা স্বল্পজ্ঞানী লোকদের সাথে বিতর্কের উদ্দেশ্যে কিংবা মানুষকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করার মানসে ইলম অন্বেষণ করে আল্লাহ তাআলা তাকে জাহান্নামে দাখিল করবেন।’ –জামে তিরমিযী, হাদীস ২৬৫৪
তাহলে আর লাভ কী হল? কুরআন পাঠের চূড়ান্ত উদ্দেশ্য তো আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি অর্জন। কিন্তু নিয়ত যদি বিশুদ্ধ না হয়, অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকে তাহলে তো মূল লক্ষ্যই ভেস্তে যাবে।
শাইখুল হিন্দ রাহ.–ও তাঁর তরজমায়ে কুরআনের ভূমিকায় পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করেছেন, তরজমা পড়া ও তরজমা করার উদ্দেশ্য কী? আম মানুষের জন্য যে তরজমা করা হচ্ছে তা কেন করা হচ্ছে? সেই তরজমা যখন পড়া হবে তখন কী উদ্দেশ্যে পড়া হবে? বিভিন্ন জায়গায় সংক্ষেপে আলোচনা করেছেন। এক জায়গায় তরজমার মূল লক্ষ্য–উদ্দেশ্য লিখেছেন–
یعنی کلام الہی جل جلالہ کا صحیح مطلب سلف صالحین کے ارشادات کے موافق سہولت کے ساتھ مسلمانان ہند کی سمجھ میں آسکے
উদ্দেশ্য হচ্ছে, ‘কালামে ইলাহীর সঠিক অর্থ–মর্ম সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন, তাবে তাবেঈন থেকে যেভাবে বর্ণিত হয়ে এসেছে সেভাবেই যেন হিন্দের মুসলিমেরা সহজে তা বুঝতে পারে।’
যাঁরা তরজমা করেছেন তারা এই উদ্দেশ্যে তরজমা করেছেন। যারা তরজমা পাঠ করবেন তারা কী উদ্দেশ্যে পাঠ করবেন? হযরত লেখেন—
اسکے بعد یہ عرض ہے کہ مسلمانوں پر فرض ہے کہ اپنے رب کو پہچانیں اور اس کی صفات اور اس کے احکام کو معلوم کریں اور تالاش کریں کہ حق تعالی کون سی بات سے خوش ہوتا ہے اور کون سی بات پر غصہ ہوتا ہے اور اس کی خوشی کے کاموں کو کرنا اور نا خوشی کے کاموں سے بچنا اسی کا نام بندگی ہے اور جو بندگی نہ کرے وہ بندہ نہیں، سب جانتے ہیں کہ آدمی جب پیدا ہوتا ہےسب چیزوں سے نا واقف اور انجان ہوتا ہے پھر سکھلانے سے سب کچھ سیکھ لیتا ہے اور بتلانے سے ہر چیز جان لیتا ہے اسی طرح حق تعالی کا پہچاننا اور اس کی صفات اور احکام کا جاننا بھی سکھلانے اور بتلانے سے آتا ہے.
لیکن ان باتوں کو جیسا حق تعالی نے اپنے کلام میں خود بتلایا ہے ویسا کوئی نہیں بتلا سکتا
اور جو اثر اور برکت اور ہدایت حق تعالی کے کلام پاک میں ہے وہ کسی کے کلام میں نہیں. ترجمہ ص31 – اصل مقدمۂ ترجمہ ص8
উপরের উদ্ধৃতির মূল কথাটা হচ্ছে, কুরআনে কারীম পড়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহকে চেনা। আল্লাহ পাকের সিফাত ও গুণাবলি জানা। আল্লাহ পাকের বিধি–বিধানকে জানা।
আমাদের উস্তায বলেন, আলইলমু বিল্লাহ ওয়া বিআহকামিল্লাহ। আল্লাহ তা’আলাকে জানা এবং আল্লাহ তা’আলার বিধি–বিধানকে জানা। এইজন্য তরজমা–তাফসীর। এই চেতনা নিয়ে কুরআনে কারীমের তরজমা–তাফসীর পাঠ করতে হবে। এজন্য না যে, নতুন নতুন মাসআলা বের করে, নতুন নতুন কথা বলে মানুষের মধ্যে হৈ চৈ তৈরি করে দেওয়া হবে। নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক।
বর্তমান সময়ের বিখ্যাত আলিম হযরত মাওলানা মুফতী তাকী উসমানী ছাহেব তাঁর ‘আসান তরজমায়ে কুরআন’ কিতাবের ভূমিকায়, যার অনুবাদ তাফসীরে তাওযীহুল কুরআন নামে প্রকাশিত হয়েছে, এ বিষয়ে একটি শিরোনামই এনেছেন। কুরআনের তাফসীর সম্বন্ধে একটি মারাত্মক বিভ্রান্তি। এই শিরোনামে তাফসীরে তাওযীহুল কুরআনের ভূমিকাতে এটা আছে। এতে তিনি বলেন,
‘বড় আফসোসের কথা, কিছুকাল পূর্ব থেকে মুসলিমদের মধ্যে এই বিপজ্জনক মহামারি বিস্তার লাভ করেছে যে, বহু লোক মনে করে, কুরআন মাজীদের তাফসীরের জন্য কেবল আরবী ভাষা জেনে নেওয়াই যথেষ্ট। সুতরাং যে ব্যক্তি কিছু আরবী ভাষা শিখে ফেলে সে কুরআন মাজীদের তাফসীর সম্বন্ধে নিজস্ব মত প্রকাশ শুরু করে দেয়। বরং অনেক লোককে এমনও দেখা গেছে, যারা আরবী ভাষা সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান রাখে না, অতি সামান্য কিছু ধারণা রাখে মাত্র, তারা কুরআন মাজীদের কেবল মনগড়া তাফসীর করাটাই নয়; বরং প্রাচীন মুফাসসিরগণের ভুলত্রুটি ধরার পেছনে লেগে যায়।
এমনকি কোনো কোনো লোক তো কেবল অনুবাদ পড়েই নিজেকে কুরআনের মহা পণ্ডিত গণ্য করে এবং নির্দ্বিধায় বড় বড় মুফাসসিরদের সমালোচনা করতে থাকে। খুব ভালোভাবে বুঝে নেওয়া দরকার যে, এটা অত্যন্ত বিপজ্জনক কর্মপন্থা। দ্বীনী বিষয়ে এটা ধ্বংসাত্মক পথভ্রষ্টতার দিকে নিয়ে যায়।’
সামনে আরো বলেন,
‘জীবন ও জ্ঞানের প্রতিটি শাখায় প্রতিটি লোক এই নীতি জানে ও মানে যে, প্রতিটি বিদ্যা অর্জন করার এক বিশেষ পদ্ধতি এবং তার জন্য বিশেষ শর্ত–শারায়েত রয়েছে, যা পূর্ণ করা ছাড়া সেই বিষয়ে তার মতামত গ্রহণযোগ্য হয় না। অন্য সবক্ষেত্রে যখন এই অবস্থা তখন কুরআন ও সুন্নাহ কী করে এমন লা–ওয়ারিশ হতে পারে যে, তার ব্যাখ্যা–বিশ্লেষণের জন্য কোনো জ্ঞান বিদ্যা অর্জনের প্রয়োজন থাকবে না এবং সে ব্যাপারে যে কারো ইচ্ছা হয় মতামত ব্যক্ত করতে পারবে।’
এই ক্ষেত্রে কারো কারো মুখে একটা কথা শুনতে পাওয়া যায়। একটা কমন প্রশ্ন। এই প্রশ্নটার জবাবও এখানে আছে।
‘কেউ কেউ বলে কুরআন মাজীদ নিজেই তো ঘোষণা করেছে–
وَلَقَدْ يَسَّرْنَا الْقُرْآنَ لِلذِّكْرِ.
নিশ্চয় আমি কুরআনকে উপদেশ গ্রহণের জন্য সহজ করে দিয়েছি।
কুরআন মাজীদ যখন একটি সহজ গ্রন্থ তখন তার ব্যাখ্যার জন্য লম্বা চওড়া জ্ঞান–বিদ্যার দরকার হবে কেন?
‘বস্তুত কুরআন মাজীদের আয়াত দুই প্রকার :
এক. সেই সকল আয়াত, যাতে সাধারণ উপদেশমূলক কথা, শিক্ষণীয় ঘটনাবলি এবং ওয়াজ ও নসীহতের বিষয়বস্তু বর্ণিত হয়েছে। যথা দুনিয়ার নশ্বরতা, জান্নাত–জাহান্নামের অবস্থাদি, আল্লাহভীতি ও আখিরাতের চিন্তা জাগ্রতকারী বিষয়াবলি এবং জীবনের অন্যান্য সাদামাটা বাস্তবতা। এ জাতীয় আয়াত নিঃসন্দেহে সহজ। যে ব্যক্তি আরবী ভাষা জানে সে তা বুঝে উপদেশ গ্রহণ করতে পারে। উপরে বর্ণিত আয়াতে এ জাতীয় শিক্ষামালা সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, আমি এগুলো সহজ করে দিয়েছি।
‘দুই. দ্বিতীয় প্রকার হচ্ছে এমন সব আয়াত, যাতে আইন–কানুন, বিধানাবলি, আকীদা–বিশ্বাস ও উচ্চাঙ্গের বিষয়বস্তু বর্ণিত হয়েছে। এ জাতীয় আয়াত যথাযথভাবে বোঝা ও তা থেকে আহকাম ও মাসায়েল উদ্ভাবন করা প্রত্যেকের কাজ নয়। এটা কেবল তাদের পক্ষেই সম্ভব, যারা ইসলামী জ্ঞান–বিদ্যায় বুৎপত্তি অর্জন করেছে। এ কারণেই তো সাহাবায়ে কেরাম যাদের মাতৃভাষা ছিল আরবী এবং আরবী বোঝার জন্য যাদের কোথাও শিক্ষা লাভের প্রয়োজন ছিল না তারা পর্যন্ত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে কুরআন মাজীদ শিক্ষা গ্রহণের জন্য সুদীর্ঘকাল ব্যয় করতেন।’
কুরআন মাজীদ শেখার পেছনে সাহাবায়ে কেরামের সুদীর্ঘ সময় ব্যয় করার কয়েকটি নমুনাও তিনি উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন,
‘মুআত্তা মালেকে বর্ণিত হয়েছে যে, আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. কেবল সূরা বাকারা শিখতে পূর্ণ আট বছর ব্যয় করেছেন। মুসনাদে আহমাদে আনাস রা. থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সূরা বাকারা ও আলে ইমরান শিখে ফেলত তার মর্যাদা আমাদের দৃষ্টিতে অনেক উঁচু হয়ে যেত। চিন্তা করার বিষয় এই যে, এই সাহাবায়ে কেরামের মাতৃভাষা তো ছিল আরবী। তারা আরবী কাব্য সাহিত্যে পূর্ণ দক্ষতার অধিকারী ছিলেন। সামান্য একটু মনোযোগ দিলেই লম্বা লম্বা কাসীদা যাদের মুখস্থ হয়ে যেত। সেই তাদের মত ব্যক্তিবর্গের কুরআন মাজীদ মুখস্থ করতে ও তার অর্থ বুঝতে এত দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হত কেন? মাত্র একটি সূরা শিখতে তাদের আট বছর লাগত কী কারণে?
এর কারণ কেবল এটাই যে, কুরআন মাজীদ ও তার জ্ঞানরাশি শেখার জন্য কেবল আরবী ভাষার দক্ষতাই যথেষ্ট ছিল না; বরং সে জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহচর্য দ্বারা উপকৃত হওয়া ও তার থেকে যথারীতি শিক্ষা গ্রহণ করা অপরিহার্য ছিল।
এবার ভেবে দেখুন, আরবী ভাষায় দক্ষতা থাকা ও ওহী নাযিলের প্রত্যক্ষদর্শী হওয়া সত্ত্বেও কুরআনের আলেম হওয়ার জন্য সাহাবায়ে কেরামেরই যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে নিয়মিত শিক্ষা গ্রহণের প্রয়োজন হয়েছিল তখন কুরআন নাযিলের হাজারো বছর পর আরবী ভাষা সম্পর্কে সামান্য একটু ধারণা লাভ করেই কিংবা কেবল অনুবাদ পড়েই মুফাসসিরে কুরআন হয়ে যাওয়ার দাবি কত বড় ধৃষ্টতা! এবং ইলম ও দ্বীনের সাথে কেমন দুঃখজনক তামাশা! যারা এমনতর ধৃষ্টতা প্রদর্শন করে তাদের উচিত মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই ইরশাদ ভালোভাবে স্মরণ রাখা–
من قال في القرآن بغير علم فليتبوّأ مقعده من النار.
যে ব্যক্তি কুরআন সম্পর্কে না জেনে কোনো কথা বলে, সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয়।
‘আরো ইরশাদ–
من تكلم في القرآن برأي فأصاب فقد أخطأ.
যে ব্যক্তি কুরআনের ক্ষেত্রে কেবল নিজের মতের ভিত্তিতে কথা বলে এবং তাতে কোনো সঠিক কথাও বলে তবুও সে ভুল করে।’ [দ্র. ভূমিকা, তাফসীরে তাওযীহুল কুরআন (বাংলা) প্রথম প্রকাশ, পৃ. ৫৪–৫৬]
ষষ্ঠ মূলনীতি
এরপর ষষ্ঠ মূলনীতি তরজমা পাঠ ও তাদাব্বুর। কুরআনে কারীমের তরজমা–তাফসীর পাঠের পাশাপাশি আমাদের এক গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য তাদাব্বুরে কুরআন। এই শব্দের সাথে এখন আমরা অনেকেই পরিচিত। কিন্তু আসলে তাদাব্বুর কাকে বলে– এই বিষয়টা একটু স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। উস্তাযে মুহতারাম হযরত মাওলানা আবদুল মালেক ছাহেব হাফিজাহুল্লাহু তাআলা ওয়া রাআহু তাফসীরে তাওযীহুল কুরআনের শুরুতে তাঁর নাতিদীর্ঘ ভূমিকায় খুব সুন্দরভাবে বিষয়টি নিয়ে বলেছেন। এই ভূমিকাটাও সবার পড়ে নেওয়া উচিত।
উস্তাযে মুহতারাম লেখেন,
‘প্রকাশ থাকে যে, কুরআনের তাদাব্বুর কেবল অর্থ বোঝার নাম নয়। অর্থ তো আরবের কাফের মুশরিক এবং মুনাফিকরাও বুঝত। কিন্তু তারা তাদাব্বুর আদৌ করত না। তাদাব্বুর না করার কারণে আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজীদের বিভিন্ন স্থানে তাদের নিন্দা করেছেন। তাদাব্বুরের সত্তাসার হল, উপদেশ গ্রহণের লক্ষ্যে ভক্তি ও ভালবাসা সহকারে চিন্তা ও ধ্যানমগ্নতার সাথে আয়াতসমূহ পাঠ করা। সেইসঙ্গে সতর্ক থাকা, যাতে আল্লাহ তাআলার উদ্দিষ্ট মর্ম বোঝার ক্ষেত্রে আমার ব্যক্তিগত মেযাজ মর্জি ভাবাবেগ ও চিন্তা চেতনার কিছুমাত্র প্রভাব না পড়ে।’
এরপর একটি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি উল্লেখ করেছেন, যেটা সকল মূলনীতির মূলনীতি হওয়ার দাবি রাখে। তিনি বলেন, ‘তাদাব্বুর ফলপ্রসূ ও ঝুঁকিমুক্ত হওয়ার জন্য একটি বুনিয়াদি শর্ত এই যে, লক্ষ্য রাখতে হবে, তাদাব্বুরের ফল যেন প্রজন্ম পরম্পরায় প্রাপ্ত আকীদা–বিশ্বাস, চিন্তা–চেতনা, চূড়ান্ত শরয়ী বিধান ও সালাফে সালেহীন বা মহান পূর্বসূরিদের ঐকমত্যভিত্তিক তাফসীরের পরিপন্থী না হয়। সেরকম হলে নিশ্চিত ধরে নিতে হবে তাদাব্বুর সঠিক পন্থায় হয়নি। যদ্দরুন তা থেকে সঠিক ফল উৎপন্ন হয়নি।’
হযরত অন্যত্র লেখেন, ‘কুরআনের সব ধরনের আয়াতেই বার্তা থাকে। শুধু আদেশ–নিষেধের আয়াতেই বার্তা রয়েছে– এমন নয়; বরং সব ধরনের আয়াতেই এবং প্রতিটি আয়াতেই পয়গাম ও বার্তা রয়েছে। ভবিষ্যতের সংবাদ হোক বা অতীতের ঘটনা; উপমা ও দৃষ্টান্তসম্বলিত আয়াত হোক বা প্রতিশ্রুতি ও হুঁশিয়ারির আয়াত, কাফের–মুশরিক, ইহুদী–খ্রিস্টান ও মুনাফিকদের সাথে সম্পৃক্ত আয়াত হোক বা মুমিন মুসলমানদের সাথে সম্পৃক্ত আয়াত, পূর্বেকার বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ব্যাপারে হোক বা এই উম্মতের ব্যাপারে, মোটকথা সব ধরনের আয়াতেই আমাদের জন্য রয়েছে পয়গাম ও বার্তা। যেমন আল্লাহ তাআলার ইরশাদ–
وَهُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ.
‘তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।’ –সূরা শূরা (৪২) : ১১
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলার দুটি গুণ জানানো হয়েছে। এ হচ্ছে আয়াতের অর্থ। এটুকু বোঝা এবং এই অনুযায়ী বিশ্বাস রাখাও কুরআন থেকে হেদায়েত গ্রহণের গুরুত্বপূর্ণ স্তর। কিন্তু এই সংবাদের সাথে আয়াতের একটি বার্তাও রয়েছে। তা হল আমরা যেন আমাদের দিন–রাতের কথা–কাজ, অবসর ও ব্যস্ততা এবং সংকল্প ও প্রতিজ্ঞা সবকিছুর দিকেই সজাগ দৃষ্টি রাখি, এগুলো আল্লাহর সন্তুষ্টির খেলাফ হচ্ছে না তো? মানুষের কাছে জবাবদিহিতা থেকে বেঁচে গেলেই নিশ্চিন্ত হয়ে যাওয়া ঠিক নয়।
কারণ আসল জবাবদিহিতা তো আল্লাহর কাছে। তিনি সব শোনেন, সব জানেন। অন্তরের গোপন খবরও জানেন। তিনি আমাকে দেখছেন। আমরা সর্বাবস্থায় তাঁর সামনে। কাজেই আমার মাঝে এই সংকোচ থাকা উচিত; আমার মাওলা যেন আমাকে তাঁর নাফরমানীর কাজে না দেখেন এবং তিনি অপছন্দ করেন এমন কোনো অবস্থায়ও না দেখেন। (এই হচ্ছে তাদাব্বুর।)
অথবা যখন এ দুটি আয়াত তেলাওয়াত করি–
فَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ، وَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَرَهُ.
কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করে থাকলে সে তা দেখতে পাবে। কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করে থাকলে সে তা–ও দেখতে পাবে। –সূরা যিলযাল (৯৯) : ৭–৮
এক তো হল আয়াতের অর্থ। হাশরের ময়দানে প্রত্যেক ব্যক্তি তার সকল কৃতকর্ম নিজের সামনে উপস্থিত পাবে। অণু পরিমাণ নেক আমল করলে সেটাও দেখতে পাবে। অণু পরিমাণ মন্দ আমল থাকলে সেটাও দেখতে পাবে। এটি হাশর–ময়দানের একটি চিত্র, যা আখেরাতে ঈমানের অংশ। তবে এ আয়াত দুটিতে ময়দানে মাহশারের দৃশ্য অবতারণের পিছনে একটি বার্তা এ–ও যে, আমরা যেন ঐ দিনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করি। আর এ প্রস্তুতির ক্ষেত্রে আমাদের কর্মপন্থা এই না হয় যে, শুধু বড় কোনো আমলের সুযোগ এলে সেটা করব, ছোট আমলের গুরুত্ব দিব না।
তদ্রুপ এই শিথিলতাও করব না যে, শুধু বড় গোনাহ থেকেই বেঁচে থাকব। ছোট ছোট গোনাহকে ক্ষতির কারণ নয় মনে করে তা থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে সচেষ্ট হব না। বরং আমলের ব্যাপারে আমাদের কর্মপন্থা এমন হওয়া উচিত যে, ভালো কাজ যত ছোট ও সহজ হোক তা আমি ছাড়ব না। আর গোনাহের কাজ যত ছোট ও সামান্যই মনে হোক তা করব না। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী—
لا تحقرنّ من المعروف شيئا.
কোনো নেক আমলকে ছোট ভেবো না। -(সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৬২৬)
এরপরে আরো লেখেন, ‘কাফের–মুশরিকদের ব্যাপারে যে সকল আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে ঐ সকল আয়াতকে কাফের–মুশরিক সংক্রান্ত আয়াত মনে করে চলে যাওয়া ঠিক না; বরং সেখান থেকেও এই শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণ করা উচিত যে, কাফের–মুশরিকের সাথে কোনো পর্যায়ের সামঞ্জস্য যেন আমার না হয়ে যায়। তা থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা উচিত।
‘নিজের মুহাসাবা ও নসীহত গ্রহণের বিষয়ে আয়াতের শানে নুযূল ও আয়াতের উদ্দিষ্ট ব্যক্তি মূখ্য নয়। মানে যাদের ক্ষেত্রে অবতীর্ণ হয়েছে শুধু তাদের জন্যই এখানে পয়গাম আছে, অন্যদের জন্য নেই– বিষয়টি এরকম নয়। বরং দেখতে হবে, আমার অবস্থা তাদের অবস্থার সাথে মিলে যাচ্ছে না তো, যাদের আল্লাহ তিরষ্কার করেছেন। এভাবে উপদেশ গ্রহণ করাই মুমিনের কাজ।
তবে এ ধরনের বাহ্যিক সামঞ্জস্যের কারণে অন্য কোনো মুমিনকে সরাসরি এই আয়াতের দৃষ্টান্ত সাব্যস্ত করার অধিকার কারো নেই। এটা হল সীমারেখা। নিজের মুহাসাবার ক্ষেত্রে এভাবে চিন্তা করতে হবে যে, কাফের–মুশরিকদের ব্যাপারে যে আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয়েছে, তাতে ওদের যে মন্দ পরিণাম উল্লেখিত হয়েছে তার দাবি হচ্ছে, ওদের সাথে কোনো পর্যায়ের সামঞ্জস্যও যেন আমার না হয়। এটা হল নিজের মুহাসাবার বিষয়। আবার অন্যের ব্যাপারে যেন এই আয়াত প্রয়োগ না করা হয় যে, তার মধ্যে তো এই বিষয়টা পাওয়া যাচ্ছে। সে তো কাফেরের মতো হয়ে গেছে। সে কাফের হয়ে গেছে। নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক। এটা ভুল হয়ে যাবে। সিদ্ধান্তের পর্যায়ে চলে যাবে।’
এ পর্যন্ত মোট ছয়টি মূলনীতি আলোচনা করা হল। আমরা যারা তরজমা–তাফসীর পড়তে চাই তাদের পড়াটা যেন সঠিক ও নিখুঁত হয়, তরজমা–তাফসীর পাঠের যে উদ্দেশ্য– আমাদের আকীদা, বিশ্বাস, কর্ম ও জীবন গঠন তাতে যেন আমরা সফল হতে পারি, কুরআন মাজীদের নূর, আলো, খাইর ও বরকত যেন হাসিল করতে পারি এজন্য বড়দের বলে যাওয়া কিছু মূলনীতি আলোচনা করা হল। উলামায়ে কেরামের সাহচর্য অবলম্বন করে তাদের তত্ত্বাবধানে কুরআনে কারীমের উলূম ও মাআরিফ অর্জনে সচেষ্ট হতে পারলে ইনশাআল্লাহ ইলমের পথে আমাদের পথচলা নিরাপদ হবে বলে আশা করা যায়।
(মূল: মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আব্দুল্লাহ)
# তাফসীরুল কুরআন (PDF) কালেকশন সমগ্র:
[নিচের তালিকাবদ্ধ বইয়ের নাম হতে আপনার প্রয়োজনীয় পিডিএফ ফাইলটি ডাউনলোড করতে যেকোন একটি সার্ভারের ডাউনলোড লিঙ্ক বেছে নিন।]
০০০১. তাফসীর ইবনে কাসীর (১-১১ খণ্ড) [ই.ফা]
Download: Drive Link
০০০২. তাফসীর ইবনে কাসীর (১-১৮ খণ্ড) [ড. মুজিবুর রহমান অনূদিত]
Download: Drive Link
০০০৩. তাফসীরে জালালাইন (১-৭ খণ্ড)
Download: Drive Link
০০০৪. তাফসীরে তাবারী শরীফ (১-৯ খণ্ড) [ই.ফা]
Download: Drive Link
০০০৫. তাফসীর ফী যিলালিল কোরআন (১-২২ খণ্ড)- সাইয়্যেদ কুতুব শহীদ (র.)
Download: Drive Link
০০০৬. তাফসীরে আনওয়ারুল কুরআন (১-৬ খণ্ড) – মাওলানা মুহাম্মাদ আবুল কালাম মাসুম
Download: Drive Link
০০০৭. তাফসীরে ওসমানী (১ম,২য় ও ৭ম খণ্ড)- মাওলানা শাববীর আহমদ ওসমানী
Download: Drive Link
০০০৮. তফসীরে মা’আরেফুল কোরআন (১-৮ খণ্ড) [ই.ফা.]
Download: Drive Link
০০০৯. তাফসীরে মাযহারী (১-১২ খণ্ড)- [কাযী ছানাউল্লাহ্ পানিপথী (র.)]
Download: Drive Link
০০১০. তাফসীরে সাঈদী সমগ্র
Download: Drive Link
০০১১. তাফহীমুল কুরআন ১-১৯ খণ্ড [সাইয়্যেদ আবুল আ’লা মওদূদী (র.)]
Download: Drive Link
০০১২. শব্দার্থে আল কুরআনুল মাজীদ (১-১০ খণ্ড) [মতিউর রহমান]
Download: Drive Link
০০১৩. শব্দে শব্দে আল কুরআন (১-১৪ খণ্ড) [মাওলানা মুহাম্মাদ হাবীবুর রহমান]
Download: Drive Link
[সংক্ষিপ্ত তাফসীরুল কুরআন]
০০১. আহকামুল কুরআন (১-২ খণ্ড) [ইমাম আবু বকর]
Download: Drive Link
০০২. কুরআনুল কারীম (১-২ খণ্ড) [বাদশা ফাহাদ কমপ্লেক্স]
Download: Drive Link
০০৩. তাফসীরে তাওযীহুল কুরআন (১-৩ খণ্ড) (মুফতী তাকি উসমানী)
Download: Drive Link
০০৪. সহজ বাংলায় আল কুরআনের অনুবাদ (১-৩ খণ্ড) [মাওলানা মওদূদী]
Download: Drive Link
[আল-কুরআনের বাংলা অনুবাদ]
০১. আল কুরআন বাংলা অনুবাদ আরবীসহ – মাওলানা মুহাম্মদ মূসা
Download: Drive Link
০২. আল কুরআন শিক্ষা পদ্ধতি (ই.ফা)
Download: Drive Link
০৩. আল কুরআন সহজ বাংলা অনুবাদ – আবদুস শহীদ নাসিম
Download: Drive Link
০৪. আল কুরআনুল করীম – (ই.ফা.)
Download: Drive Link
০৫. আল কুরআনুল কারীম সরল অর্থানুবাদ – আল বায়ান ফাউন্ডেশন
Download: Drive Link
০৬. কুরআন মাজীদ বাংলা অনুবাদ – ড. মুহাম্মাদ মুজীবুর রহমান
Download: Drive Link
০৭. কুরআন শরীফ – বঙ্গানুবাদ – মৌলভী ভাই গিরিশ চন্দ্র সেন
Download: Drive Link
০৮. কুরআন শরীফ (১ম খণ্ড) – আকরাম খাঁ
Download: Drive Link
০৯. কুরআন শরীফ (২য় খণ্ড) – আকরাম খাঁ
Download: Drive Link
১০. কুরআনের সহজ সরল বাংলা অনুবাদ আরবিসহ – হাফেয মুনির উদ্দিন আহমদ
Download: Drive Link
১১. কোরআনুল কারীম অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর – মুফতি মুহাম্মাদ শফী
Download: Drive Link
১২. তরজমায়ে কুরআন মজীদ – সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী
Download: Drive Link
১৩. পবিত্র কুরআন বাংলা অনুবাদ আরবীসহ – আবদুল্লাহ ইউসুফ আলী
Download: Drive Link
১৪. মুজামুল কুরআন – ইন্টিগ্রেটেড এডুকেশন এন্ড রিসার্চ সেন্টার
Download: Drive Link
১৫. সহজ জামালুল কুরআন – মাওলানা আশরাফ আলী থানবী
Download: Drive Link
[অন্যান্য তাফসীর সমূহ]
১. তাদাব্বুরে কুরআন (১-২ খণ্ড) – মাওলানা আমীন আহসান ইসলাহী
Download: Drive Link
২. দারসুল কুরআন সংকলন (১-২ খণ্ড) – এ. কে. এম নাজির আহমদ
Download: Drive Link
৩. দারসুল কুরআন (১-২ খণ্ড) – এ. জি. এম. বদরুদ্দোজা
Download: Drive Link
৪. দারসুল কুরআন (১-২ খণ্ড) – মাওলানা হামিদা পারভীন
Download: Drive Link
৫. দারসে কুরআন (১-৬ খণ্ড) – অধ্যাপক আবদুল মতিন
Download: Drive Link
৬. নির্বাচিত দারসে কুরআন (১-৩ খণ্ড) – জুনাব আলি ভুঁইয়া
Download: Drive Link
৭. বিষয় ভিত্তিক কুরআন ও হাদিস (১-২ খণ্ড) – জুল্লাবুম ও এ্যাডওয়ার্ড মন্টেন
Download: Drive Link
৮. Vocabulary of the holy Quran – মোঃ নূরুল ইসলাম মণি
Download: Drive Link
৯. আত তাফসীর আল মুইয়াসসার ২য় পারা – একদল বিশেষজ্ঞ সৌদি আলেম
Download: Drive Link
১০. আমপারা উচ্চারণসহ বাংলা অনুবাদ – মুহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া
Download: Drive Link
১১. আমপারা বাংলা অনুবাদ – মুহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া
Download: Drive Link
১২. আল আনফালের তাফসীর – আহমদ মুহাম্মদ শাকের
Download: Drive Link
১৩. আল কুরআন আত তাফসির – আবদুস শহীদ নাসিম
Download: Drive Link
১৪. আল কুরআনের ৫০ ভাগ শব্দের সংক্ষিপ্ত অভিধান – কাজী সাগীর আহমদ
Download: Drive Link
১৫. আল কুরআনের অভিধান – মুহাম্মদ খলিলুর রহমান মুমিন
Download: Drive Link
১৬. আল কুরআনের অভিধান – শাইখ আবদুল কারীম পারেখ
Download: Drive Link
১৭. আল কুরআনের বিষয় ভিত্তিক আয়াত
Download: Drive Link
১৮. আল কুরআনের বিষয়ভিত্তিক আয়াত (১ম খণ্ড) – ইসলামিক ফাউন্ডেশন
Download: Drive Link
১৯. আল কুরআনের সার সংক্ষেপ – মাওলানা মুহাম্মদ তৈয়ব আলী
Download: Drive Link
২০. আল কোরআনের বিষয় অভিধান – আসাদ বিন হাফিয
Download: Drive Link
২১. আল-কুরআনের বিষয়ভিত্তিক আয়াত (৪র্থ খণ্ড) – ইসলামিক ফাউন্ডেশন
Download: Drive Link
২২. আল-কুরআনের সংক্ষিপ্ত তাফসীর (২য় খণ্ড)
Download: Drive Link
২৩. আল-কুরআনের সংক্ষিপ্ত তাফসীর (৩য় খণ্ড)
Download: Drive Link
২৪. উম্মুল কোরআন – অনুবাদঃ আখতার ফারুক
Download: Drive Link
২৫. কুরআন ও হাদীস সঞ্চয়ন (১ম, ২য় ও ৩য় খণ্ড) – অধ্যাপক মাওলানা আতিকুর রহমান
Download: Drive Link
২৬. কুরআন হাদিস সংকলনের ইতিহাস – এ. কে. এম. এনামুল হক
Download: Drive Link
২৭. কুরআনের অভিধান – হাফেয মুনির উদ্দিন আহমদ
Download: Drive Link
২৮. তাইসীরুত তাফসীর আল হুজরাত – ড. মুহাম্মদ বেলাল হোসেন
Download: Drive Link
২৯. তাওযীহুল কুরআন – আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ
Download: Drive Link
৩০. তাফসিরুল উশরুল আখীর: মুসলিম জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিধান
Download: Drive Link
৩১. তাফসীর আয়াতুল কুরসী – ড. ফযলে ইলাহি
Download: Drive Link
৩২. তাফসীরুল কুরআন ৩০ তম পারা – মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল গালিব
Download: Drive Link
৩৩. তাফসীরে আইনি (আমপারা)
Download: Drive Link
৩৪. তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ – মুহাম্মদ শরফুল ইসলাম
Download: Drive Link
৩৫. তাফসীরে বায়যাবী (সূরা ফাতিহা) – নাসিরুদ-দীন আবদুল্লাহ আল-বায়যাবী
Download: Drive Link
৩৬. তাফসীরে সূরা তাওবা – ড. শহীদ আব্দুল্লাহ আযযাম
Download: Drive Link
৩৭. তাফহীমুল কুরআনঃ আমপারা তাফসীর
Download: Drive Link
৩৮. তালিমুল কুরআন (১ম খণ্ড) – আল্লামা ইউসুফ ইসলাহী
Download: Drive Link
৩৯. তালীমুল কুরআন – মাওলানা এ. কে. এম. শাহজাহান
Download: Drive Link
৪০. দরসুল কোরআন (১ম খণ্ড) – আবুল কালাম মুহাম্মাদ ইউসূফ
Download: Drive Link
৪১. দারসে কুরআন: সূরা মুযযাম্মিল– সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদুদী
Download: Drive Link
৪২. নির্বাচিত কুরআন ও হাদীস সঞ্চয়ন – মুহাম্মদ গোলাম মাওলা
Download: Drive Link
৪৩. প্রশ্নোত্তরে তাফসীরুল বায়যাবী – কাযী নাসির উদ্দিন আব্দুল্লাহ
Download: Drive Link
৪৪. ফাতেহার তাফসীর – মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওহ্হাব
Download: Drive Link
৪৫. বিষয় ভিত্তিক আয়াত ও হাদিস সংকলন – আই সি এস পাবলিকেশন
Download: Drive Link
৪৬. বিষয় ভিত্তিক কুরআন ও হাদিস – ছাত্র কল্যাণ পরিষদ
Download: Drive Link
৪৭. বিষয়ভিত্তিক কুরআন ও হাদীস সংকলন (১ম খণ্ড) – মোঃ রফিকুল ইসলাম
Download: Drive Link
৪৮. লুগাতুল কোরআন – মাওলানা আবদুল করীম পারেখ
Download: Drive Link
৪৯. শব্দে শব্দে আল কুরআনের অভিধান – শাইখ আবদুল করীম পারেখ
Download: Drive Link
৫০. সঞ্চয়ন বিষয় ভিত্তিক কুরআন ও হাদিস
Download: Drive Link
৫১. সুরা আত-তাওবা এর তাফসীর – আবুল ফিদা ইসমাঈল ইবন ওমর ইবন কাসীর
Download: Drive Link
৫২. সূরা আন-নাবা-এর তাফসীর – আবু আব্দুল্লাহ কুরতুবী
Download: Drive Link
৫৩. সূরা আল ফাতিহা এর তাফসীর – মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব
Download: Drive Link
৫৪. সুরাতুস স্বালাহ – ড. আব্দুল হাকীম বিন আব্দুল্লাহ আল ক্বাসীম
Download: Drive Link
৫৫. সূরা আল-আনফালের তাফসীর – আহমদ মুহাম্মাদ শাকের
Download: Drive Link
♦ অনলাইনে বই ক্রয়ের জনপ্রিয় কয়েকটি প্ল্যাটফর্ম –
- https://rokomari.com
- https://boibazar.com
- https://bookhousebd.com
- https://wafilife.com
- https://ruhamashop.com